ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেট্রো রেল সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা আন্দোলন করছেন।
শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে মেট্রোরেলের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এগুলো (নকশা পরিবর্তন) করতে গেলে পুরো প্রজেক্টটা নষ্ট হবে।সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হবে।
যারা ইউনিভার্সিটিতে পড়বে তারা তো ৩/৪ বছর পড়ে চলে যাবে। সাধারণ মানুষের যে কষ্টটা, সে কষ্টটাতো থেকে যাবে। সে কষ্টের ভোগান্তিটা কেনো মানুষকে দেবেন?
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে ‘মেট্রোরেলের রুট বদলাও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও এ কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
উন্নয়ন বন্ধ করাই এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ দেখি একটা আন্দোলন। এটা তো হঠাৎ করে না, কয়েক বছরের কাজ।এটাকে বাধাগ্রস্ত করা মানে এর কাজ মুখ থুবড়ে পড়বে।
মেট্রোরেল হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের জিন প্রকৌশল, সিএসই, অণুজীব বিজ্ঞান ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ বিভাগ সরাসরি হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি রাজু ভাস্কর্যও তার চিরচেনা সৌন্দর্য হারাবে বলে দাবি করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এই ট্রেনের শব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও দোয়েল চত্বরের পাশে অবস্থিত বিজ্ঞান লাইব্রেরিতে লেখাপড়া ব্যাহত হবে বলেও দাবি তাদের।
তাদের শঙ্কা নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম কন্ট্রোল করা হবে। সে জ্ঞানও তাদের নেই। সে খবরটাও তারা রাখেন না।
এছাড়া মেট্রোরেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
ছাত্রদের আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পড়ার ইচ্ছা থাকলে মানুষ সুযোগ করেই নেয়। আর, যদি ইচ্ছা না থাকে, তাহলে ছুতা অনেক পাওয়া যায়।পড়ার ইচ্ছা থাকলে পড়া যায়। ট্রেনে চলতে চলতে তো মানুষ পড়ে।
চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তো রেল যায়। সেখানে তো তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় না। মেট্রোরেলে পড়াশোনার কোনো অসুবিধা হবে না।
বাড়ি নির্মাণ কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কতটুকু ক্ষতি হয় সে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যেখানে বসবাস করে সেখানে তো দিনরাত কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে। সেখানে পড়ছে না?
ষাট দশকে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে রেললাইনই ছিল। মেট্রোরেল তো ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারীদের কথা চিন্তা করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে এই লাইন যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন,একটা অ্যালাইনমেন্ট দিলাম যে ওখানে একটা স্টেশন হবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরোধিতা থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কাছ থেকে আমরা অর্থ ধার নিচ্ছি তারা অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। আর উন্নয়নটা হবে না।
“আমার উন্নয়নের কাজে কেউ দয়া করে বাধা দেবেন না।”
ঢাকার বহুল প্রতিক্ষীত মেট্রোরেল প্রকল্প নির্ধারিত সময় ২০১৯ সালে বাস্তবায়িত হলে রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে মোট ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেইট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই ট্রেন, সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম।
রাজধানীতে মেট্রোরেল রুট নির্মাণে ইতোমধ্যে অ্যালাইনমেন্ট ও ১৬টি স্টেশনের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। শেষ হয়েছে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ। ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষে হবে ২০১৬ সালের অগাস্টে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানো যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।