‘নাটের গুরু’ হোস্টেল সুপার মিজানুর - দৈনিকশিক্ষা

‘নাটের গুরু’ হোস্টেল সুপার মিজানুর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ‘নাটের গুরু’ ছিলেন হোস্টেল সুপার মিজানুর রহমান। শিক্ষার্থীদের ওপর মিজানের নিয়ম মানার বাড়াবাড়ির জেরেই এ রক্তাক্ত সংঘর্ষ বলে অভিযোগ। হোস্টেলের নিয়ম-কানুন শেষ পর্যন্ত নির্যাতনের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা হোস্টেল সুপারের নিয়মের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করত সরাসরি। এ নিয়ে মিজান দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ওপর নাখোশ ছিলেন। রোববার রাতে নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নামাজ পড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির ঘটনায় সৃষ্ট সংঘর্ষের সময় শিক্ষক মিজান নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঘটনার পর মিজানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার তাকে হত্যা মামলায় দু’দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার রাতের খাবারের পর মিজানের নির্দেশেই দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। হামলায় ব্যবহৃত রড, কাঠসহ মারামারির সরঞ্জামাদি মিজানের কক্ষ থেকেই সংগ্রহ করে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে গুরুতর আহত মোফাজ্জলকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে শৌচাগারে ফেলে রাখা হয় সাড়ে তিন ঘণ্টা। কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি মোফাজ্জলকে।

পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সংঘর্ষের পর ছয়জন শিক্ষার্থীকে গোপনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় হোস্টেলের ভেতর। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আবদুর রশীদ চিকিৎসা দেন। তাদের মধ্যে নিহত মোফাজ্জল ছিল না। অবস্থা বেগতিক দেখে রাত দেড়টার দিকে মোফাজ্জলকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। তখনও পুলিশ অন্ধকারে। ঘটনার পর হামলাকারী নবম শ্রেণীর ৪০ আবাসিক শিক্ষার্থীকে পালিয়ে যাওয়ার সহায়তার অভিযোগও মিজানের বিরুদ্ধে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজানুল ইসলাম  বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা পলাতক। মামলায় হোস্টেল সুপার মিজানসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় নবম শ্রেণীর চারজন শিক্ষার্থী রয়েছে। নিহত মোফাজ্জলের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ছেলে আহত হওয়ার পরও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এক শিক্ষার্থী তাকে ফোন করে মোফাজ্জলের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। মোফাজ্জলের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, মোফাজ্জল বিভিন্ন সময় ফোন করে বলত মা আমি মাদ্রাসায় থাকব না। অনেক নির্যাতন করা হয়। আমি ভাবতাম, মাদ্রাসায় ভালো লাগে না বলে এসব কথা বলছে। আমার ছেলেটারে হোস্টেল সুপার মেরেই ফেলল।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী আবদুল আলীম রিজভী বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়েই আমি ছুটে যাই। রাত সোয়া ১২টা পর্যন্ত আমি হোস্টেলেই অবস্থান করি। রাত দেড়টার পর জানতে পারি মোফাজ্জল নিখোঁজ। পরে শৌচাগার থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশকে কেন জানানো হয়নি জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, এ ধরনের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করি। হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তার (মিজানুর রহমান) কোনো গাফিলতি ছিল না। সংঘর্ষের পর চিকিৎসক ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা করিয়েছেন তিনিই। মোফাজ্জলকে খুঁজে পাওয়ার পর তিনিই তাকে সোহরাওয়ার্দীতে নিয়ে গেছেন।

নিয়ম না মানলেই চলত নির্যাতন : মাদ্রাসাটির হোস্টেলে প্রায় সাড়ে ৫০০ আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, নিয়মের ব্যত্যয় হলেই নির্যাতন করতেন হোস্টেল সুপার মিজানুর রহমান। বেত্রাঘাতের পাশাপাশি কক্ষে আটকে রাখা এবং খাবার দেয়া বন্ধ করে দিতেন তিনি। অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেন, খেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে হোস্টেল সুপার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সামান্য শাস্তিতো দিতেই হয়। এ বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম রতন  বলেন, হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে এগুলোর তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052340030670166