নিউইয়র্ক সিটিডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন সারা শিক্ষাবর্ষ ধরেই তাদের সকল পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও অফটার স্কুল খাবার দিয়ে থাকে। আফটার স্কুল হলো স্কুলগুলোর একটা বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম যেখানে নির্দিষ্ট স্কুল আওয়ারের বাইরে দুর্বল শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারে। অনেক অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা স্কুল শুরুর ৩০ মিনিট আগে মানে সকাল ৮টায় স্কুলে ঢুকে ক্যান্টিন থেকে সকালের নাস্তা সেরে ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী যদি বিলম্বে স্কুলে আসে তবে সে ক্যান্টিন গিয়ে স্টাফদের কাছে নাস্তা চাইলেই সে নাস্তা পেয়ে যায়। কিছু স্কুলে ব্যাগে করে সকালের নাস্তা সরবরাহ করা হয় যা তারা ক্লাসে নিয়ে আসতে পারে। কারণ কর্তৃপক্ষ মনে করে, স্বাস্থ্যকর খাবার সাথে থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে চিন্তা করতে, ক্লাসের সকল কার্যক্রমে মনোযোগী হতে ও অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করে।
তবে, শুক্রবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত দুটি প্রথম শ্রেণির বাংলা দৈনিক দৈনিকে নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে এমনভাবে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে যা পড়ে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে সবময়ই যে খাবারগুলো সরবরাহ করা হয় তা হলো, ছোট প্যাকেটে করে দুধ, তাজা ফল, বিভিন্ন ফলের জুস, বিভিন্ন রকমের সিরিয়াল, ব্লুবেরিওয়েফার, মিক্সড ফ্রুট কেক, দধি, রুটি, চিজস্টিক ও মিনিপ্যান কেক। সকল খাবার শুকর মুক্ত। স্কুলে কোনো ভাজি করা খাবার দেয়া হয় না এবং এই খাবারে কোনো বানানো রং, স্বাদ, মিষ্টি ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় না।
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ১০ মার্চ থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল পাবলিক স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সার্বিক সহায়তা করে আসছে। ঘরে বসে শিক্ষার জন্য ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন একটা রিমোট লার্নিং পোর্টাল তৈরি করেছে। সেখানে সকল শিক্ষার্থীদের একাউন্ট করে একাউন্টের লগইন তথ্য শিক্ষার্থীদেরকে ই-মেইল ও সরাসরি ফোন করে সরবরাহ করা হয়েছে। এবং এই রিমোট লার্নিং পোর্টাল গুগল ক্লাসরুম, মাইক্রোসফট অফিস ও ক্লেভারের মতো বিভিন্ন শক্তিশালী অনলাইন শিক্ষার টুলের সরবরাহ করে এর মাধ্যমে ক্লাসে সংযুক্ত করে থাকে। যদি কোনো শিক্ষার্থী পোর্টালে লগইন না করে তবে তাকে ক্লাসে অনুপস্থিত ধরা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে,তাদের ক্লাস শিক্ষক বা স্কুল নার্স ফোনে কল করে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত হওয়ার কারণ জানতে চায়।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি স্কুলে একজন করে নার্স থাকে যে, স্কুল চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকে এবং প্রয়োজনে তার অভিভাবককে ফোন করে স্কুলে এনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। নার্স ফোন করে করোনাসংশ্লিষ্ট খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর ক্লাস শিক্ষক অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান করে তাকে অনলাইন ক্লাসে ফিরতে সার্বিক সহায়তা করে।
নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ও বিভিন্ন রকম মানসম্মত ও বাড়তি পুষ্টি সম্বলিত খাবার শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছে। এ জন্য নিউইয়র্ক সিটির ৪০০ স্কুলকে খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র (Meal Hubs) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো থেকে শুধু ঘরে বসে শিক্ষা নেয়া শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষার্থীদের পরিবারসহ খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র এলাকাসংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে, যে কোনো ব্যক্তি গিয়ে কোনো ধরনের আইডি কার্ড প্রদর্শন বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই তার সারা দিনের মানে তিন বেলার খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। যে ব্যক্তি বা পরিবারে স্কুল শিক্ষার্থী আছে, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে সাথে না নিয়েও পরিবারের একজন গিয়ে স্টাফদের বললে তার নিজের, পরিবারের ও শিক্ষার্থীর তিন বেলার খাবার সংগ্রহ করতে পারে। সপ্তাহে সোম থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এই খাবার সংগ্রহ করতে পারেন। এখানে হালাল ও ভেজিটারিয়ানদের জন্য ও খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরেও নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন রমজান মাস উপলক্ষে ২৩ এপ্রিল থেকে নিউইয়র্ক সিটির পাচ বোরোর ৩২টি জায়গায় মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে হালাল খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। এখানে বসে খাবার খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। খাবার সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে খেতে হয়।
নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের এই খাদ্য সরবরাহ ছাড়াও, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (U.S. Department of Agriculture-U.S.D.A.) তাদের ফুড অ্যান্ড নিউট্রেশন সার্ভিসের আওতায় (Food and Nutrition Service-FNS) সাপ্লিমেন্টারি নিউট্রেশন এসিসটান্স প্রোগ্রাম (Supplemental Nutrition Assistance Program-SNAP) এর মাধ্যমে সীমিত আয় ও সীমিত সম্পদের পরিবারকে প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। যা তারা বেঁধে দেয়া খাবার কেনায় খরচ করতে পারে। সম্প্রতি তারা কোভিড-১৯ এ আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। যে, অর্থ তাদের বর্তমানে তাদের সহায়তাপ্রাপ্ত পরিবারগুলোসহ আর অনেক করোনা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বাস্থ্যকর খাদ্য ক্রয়ের জন্য প্রতিমাসে কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। ব্যাংক কার্ডের মতো সিটির অনুমোদিত কিছু দোকানে গিয়ে শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার জন্য ব্যয় করতে পারবে। আর এর মাধ্যমেও যে সকল সীমিত আয়ের পরিবারের শিশুরা ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ করছে তাদের প্রয়োজীয় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত হবে। তবে এর সাথে নিউইয়র্ক শিক্ষা বিভাগের স্কুল শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তার কোনো সংশ্লিষ্টাতা নেই।