উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বেহাল দশা ফুটে উঠেছে গতকালের যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২৫৭টি কলেজ ও মাদ্রাসার সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কোনো কার্যকর সম্পর্ক নেই। ভাবাই যায় না, এগুলোর ১৮৫টিতে এবার কোনো ছাত্রী বা ছাত্রী ভর্তির আবেদন পর্যন্ত করেনি।
বাকি ৭২টি প্রতিষ্ঠান থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। কথা এখানেই শেষ নয়। ৬৯৭টি প্রতিষ্ঠানে সর্বনিন্ম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে আর ১৮১টি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বনিন্ম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানও অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে।
পুরো বিষয়টি তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? বোঝাই যাচ্ছে, বাছ-বিচারহীনভাবে কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উপরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঠিক কতটি এমপিওভুক্ত তা জানা যায়নি, তবে কিছু না কিছু প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই এমপিওভুক্ত।
অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন! প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, জনবল কাঠামো মেনে এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ না করে নির্বিচারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হল কেন? সহজেই বোধগম্য, রাজনৈতিক বিবেচনাতেই এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং কোনো কোনোটির তদবির এত শক্ত ছিল যে, সেগুলো এমপিওভুক্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের অর্থে গড়ে ওঠা জাতির রাজস্ব ভাণ্ডারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয়ের বিষয়টি নিশ্চয়ই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
উপরে যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে অনতি বিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধেও নিতে হবে সত্বর ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন কীভাবে দেয়া হয়েছিল, তারও একটা তদন্ত হওয়া চাই।
এটা কোনো কথাই হতে পারে না যে, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন ছাত্রও পাবলিক পরীক্ষায় পাস করবে না, অথচ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে! আমরা মনে করি, শূন্য পাস ও শূন্য ভর্তির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ ও শিক্ষকমণ্ডলীর উচিত অপমানিতবোধ করা। রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। দেশে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের বড়ই অভাব। এভাবে অর্থের অপচয় না করে সেই অর্থ দিয়ে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তা সংখ্যায় কম হলেও গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।