পদোন্নতি পাচ্ছেন সরকারি হাইস্কুলের সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

আইসিটি ও গ্রন্থাগারিকের পদ হচ্ছেপদোন্নতি পাচ্ছেন সরকারি হাইস্কুলের সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক

শফিকুল ইসলাম |

প্রথমবারের মতো সরকারি হাইস্কুলের সাড়ে পাঁচ হাজার সহকারী শিক্ষক ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকদের নতুন চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকের মোট পদের অর্ধেককে নতুন এ পদে পদোন্নতি দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এছাড়াও সরকারি হাইস্কুলগুলোতে আইসিটি শিক্ষক, ল্যাব এ্যাসিট্যান্ট ও সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ ‍সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গত সপ্তাহে সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের প্রমার্জন করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।    

অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান রোববার রাতে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের নতুন চাকরি বিধিমালায় সিনিয়র শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সাড়ে পাঁচ হাজার সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। সহকারী শিক্ষকদের এসিআর (বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন) যাছাই-বাছাই করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে। এসিআর সংগ্রহ করতে দুই এক দিনের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম শেষ হলে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে আবার নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্প্রতি পদোন্নতি দেওয়া সহকারী শিক্ষকদের প্রমার্জন করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নোতির চিন্তাভাবনা চলছে। এ ধরনের পদোন্নতির দৃষ্টান্ত আগে আছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক হতে তাদের বয়স হয়েছে।’

অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম টুকু দৈনিক শিক্ষাকে বলেন,  সরকারি হাইস্কুলগুলোতে আইসিটি, ল্যাব এ্যাসিস্ট্যান্ট ও সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। 

মাউশির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্য জাতীয়করণসহ সারাদেশে বর্তমানে ৫৩১টি হাইস্কুল রয়ে্ছে। এর মধ্যে পুরাতন সরকারি হাইস্কুলের সংখ্যা ৩১৭টি। নতুন সরকারি করা অনেক স্কুলে পদসৃজন হয়নি। পুরাতন সরকারি হাইস্কুলে ১০৯টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ৪৬৩টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও গত ১৭ সেপ্টেম্বর ৪২০ জন সহকারী শিক্ষকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৩৬৮ জন ও সহকারী জেলা শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে ৫২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি দেওয়ায় বর্তমানে সরকারি হাইস্কুলে নয় হাজার ৯২৪ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত আছেন। পদ শূন্য রয়েছে ১৯৭৬টি। শূন্য পদে সম্প্রতি পিএসসি ১৩৭৮টি পদে সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এছাড়া ৩৫ ও ৩৬তম বিসিএস চ‚ড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 

জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকদের চাকরি বিধামালার গেজেট জারি করা হয়েছে। তাতে ‘সিনিয়র শিক্ষকে’র নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকের মোট পদের ৫০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত আট বছর চাকরি করতে হবে। ব্যাচেলর অব অ্যাডুকেশন (বিএড) বা ডিপ্লোমা ইন অ্যাডুকেশন (ডিপ ইন অ্যাডু) বা ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচার অ্যাডুকেশন (বি এজ অ্যাডু) ডিগ্রি থাকতে হবে। সহকারী শিক্ষক পদকে চাকরিতে প্রবেশ পদ ধরা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষা জীবনে কোনো তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য হবে না। নতুন চাকরি বিধিমালায় ‘সিনিয়র শিক্ষক’রা কীভাবে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হবেন এবং কোন গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিধিমালা পরিমার্জন করা হবে। সিনিয়র শিক্ষকদের পদোন্নতিতে কোনো বাধা হবে না। বিধিমালা পরিমার্জন ও পদোন্নতির কার্যক্রম একই সঙ্গে চলবে।’  

জানা যায়, সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী ২০১০ সাল পর্যন্ত বিএড ডিগ্রি অর্জনের দিন থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয়। চাকরিতে যোগদানের দিন থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হতো না। চাকরিতে যোগদান করে নবীন শিক্ষকরা বিএড করে দ্রুত পদোন্নতি পেতেন। চাকরির যোগ্যতা হিসেবে বিএড ডিগ্রি বাধ্যতামূলক না থাকায় বঞ্চিত হন বিএড না করা প্রবীণ শিক্ষকরা। 

বঞ্চিত শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে নীতিমালাটি সংশোধন করা হয়। নতুন নীতিমালায় চাকরিতে যোগদানের দিন থেকেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয়। তবে বিএড ডিগ্রি বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে ৭৫ জন সহকারী শিক্ষক ২০১৫ সালের মার্চে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর রিটের রায় দিয়েছেন আদালত। তাতে বলা হয়, ২০১০ ও ২০১১ সালের নিয়োগবিধি সাংঘর্ষিক। ২০১০-এর পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের মতামত দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা আপিল করেন। গত বছরের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। মামলা জটিলতায় ২০১৪ সালের ৬ জুন থেকে সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ ছিল। গত বছরের ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট পদোন্নতির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে রায়ে বলেছেন, চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে পদোন্নতি দিতে হবে। তবে অবশ্যই বিএড ডিগ্রি থাকতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরি বিধিমালায় পদোন্নতির বিষয়টি যুক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গত ১৭ সেপ্টেম্বর ৪২০ জন সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।  

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034549236297607