পেশা হিসেবে শিক্ষকতা কতটা মর্যাদার? - দৈনিকশিক্ষা

পেশা হিসেবে শিক্ষকতা কতটা মর্যাদার?

মাসুম হাসান |

`প্রভাষককে পেটালেন মেয়র’
`ড্রামে পাওয়া লাশটি স্কুল শিক্ষিকার’
`প্রধান শিক্ষককে থাপ্পড় মারলেন বিএনপি নেতা’

উপরের সংবাদ শিরোনামগুলো সম্প্রতি `দৈনিক শিক্ষাডটকমে’ প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম ৩টি পড়ে আমি ঘটনাগুলোর বিস্তারিত জানার জন্য আগ্রহ বোধ করিনি কারণ আমি ততটা সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি। কিংবা ঘটনার বিবরণ পড়লে হয়ত আরো ভয়াবহ কিছু আমাকে হজম করতে হতে পারে – এই শঙ্কায় আমি থেমে গেছি। এদেশে বর্তমান শিক্ষকদের পরিস্থিতি বুঝতে ঐ ঘটনাগুলো বিস্তারিত পাঠ করার প্রয়োজন মনে করিনি।

পাঠকগণ দয়া করে অনুভবশক্তি কাজে লাগিয়ে হেডলাইন তিনটি আবার পড়ুন।

এবার ভাবুন -এদেশের শিক্ষকদের অবস্থা বুঝতে আসলেই কি আরো বিস্তারিত পড়ার প্রয়োজন মনে করছেন?

হ্যাঁ, প্রয়োজন মনে করতে পারেন যদি আপনি আরেকটু মজা নিতে চান কিংবা যদি আপনি বুঝতে চান এদেশের রাজনীতিবিদগণ এবং খুনী-সন্ত্রাসীরা কতটা অশেষ ক্ষমতাধর।

বর্তমান সমাজে একটি কথা চালু আছে -‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তাঁর কন্যার জন্য বর খুঁজে না পেলে নিরুপায় হয়ে সর্বশেষ চেষ্টা করেন বর হিসাবে একজন মাস্টার (শিক্ষক) খুঁজে পেতে’। আমাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল বর্তমান আর্থসামাজিক ও মনোসাংস্কৃতিক অবস্থায় এদেশে পেশা হিসাবে শিক্ষকতা কতটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমর্যাদাকর এই কথায়ই তার প্রমাণ মেলে।

এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে এদেশের মেধাবী ও প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীরা পড়াশুনা শেষে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইছে না। এখন তরুণ প্রজন্মের কেউই সম্ভবত শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে শিক্ষক হওয়ার কথা ভাবতেই অধিকাংশ তরুণ লজ্জা পায় কিংবা দুঃস্বপ্ন দেখার মতো ভয় পায়। তবে অনেকেই রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। রাস্তাঘাটে পোস্টার আর ব্যানারে নেতার চারপাশে তরুণদের লাজুক মুখচ্ছবিই তার প্রমাণ।

একজন নগরকর্তা, যিনি অসংখ্য নাগরিকের অভিভাবকতুল্য, যার উপর নির্ভর করে অসংখ্য মানুষের ভাগ্য কিংবা নিয়তি, সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতিনিধি হিসাবে যার উপর আস্থা রাখছেন, তিনি একজন কলেজ শিক্ষককে পেটালেন! ওই মেয়রের সম্ভবত কখনো কোনো শিক্ষক ছিল না। কেননা তাকে কেউ শেখাতে পারেনি যে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে প্রহার করার কোনও অধিকার রাখে না।

দ্বিতীয় শিরোনামটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। শিক্ষিকার লাশ ড্রামের ভেতর! এদেশের সংগ্রাম করা নারীরা শিক্ষিত হয়ে পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সম্মানজনক মনে করেন। অথচ ক্ষমতাধর কিংবা খুনী সন্ত্রাসীরা নারী শিক্ষকগণ তথা গোটা নারীসমাজকে কোনো ধরণের তোয়াক্কাই করে না বলে মনে হয়। এদেরও সম্ভবত কোন শিক্ষক ছিল না কখনও। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরা হয়ত কখনও মাতৃতুল্যা শিক্ষকের কাছে সন্তানস্নেহে পড়া শেখেনি।

শেষের শিরোনামটি পড়ে সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণের চূড়ান্ত ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় একজন রাজনীতিকের কাছে একজন প্রধান শিক্ষক কতটা তুচ্ছ এবং অপাঙক্তেয়। বর্তমানে ক্ষমতায় না থাকলেও কিছু যায় আসে না। যিনি একবার নেতা, তিনি চিরদিন ক্ষমতাধর কিংবা শাসক-প্রশাসক। শুধু রাজনীতিতে নেতা হিসাবে পরিচিতিটা থাকলেই হলো।
তবে এটা বাংলা সিনেমার মতো ‘২০ বছর আগের প্রতিশোধও’ হতে পারে! ২০ বছর আগে বিএনপি’র ওই নেতাকে ছোটবেলায় হয়ত তার শিক্ষক থাপ্পড় মেরে শাসন করেছিলেন আর তখনই হয়ত তিনি প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন যে বড় হয়ে একদিন প্রধান শিক্ষকের গালে কষে চড় বসিয়ে এর প্রতিশোধ নেবেন।

আসলে বর্তমানে বাংলাদেশে ‘শিক্ষকতা’ সম্ভবত পেশা নয়, গোলামী কিংবা এক ধরণের উৎকৃষ্ট ভিক্ষাবৃত্তি। কেননা সরকার থেকে ধরে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের সবাই যেন শিক্ষক সম্প্রদায়কে দয়া করছে, অনুগ্রহ দেখাচ্ছে। এদেশের সকল স্তরের শিক্ষকগণ যেন পেশীশক্তি ও অপরাজনীতির হুকুমের নিরীহ গোলামমাত্র। আর এই নষ্ট হওয়া, পচনধরা মূল্যবোধের জন্য কে দায়ী বা কাকে দায়ী করব তা আমরা কেউই হয়ত জানি না।

মাসুম হাসান: প্রভাষক(বর্তমানে চাকুরিচ্যুত), ইংরেজি বিভাগ, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজ, টঙ্গী, গাজীপুর।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079061985015869