বিশ্রাম কাজের অঙ্গ একসঙ্গে গাঁথা নয়নের অঙ্গ যেন নয়নের পাতা
বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সারা বিশ্বে স্বাভাবিক কর্ম সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সময়ে কাজ করার জন্য ওভারটাইম হিসেবে সর্বত্র বাড়তি অর্থ দেয়ার বিধান বিদ্যমান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫+ থেকে ১০+ বয়সের শিশুরা অধ্যয়ন করে থাকে। এদের অবুঝ শিশু বললে ভুল হবে না।
শত শত শিশুর হৈচৈ ও উচ্চস্বরের কথাবার্তা সহ্য করে প্রাথমিক শিক্ষকদের পাঠদান করতে হয়, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন। এছাড়াও শিশুদের থাকে নানা অভিযোগ। শাস্তিবিহীন অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করতে হয় নানাবিধ অভিযোগ।
সরকারি কর্মচারীদের ছুটির তালিকায় ২২ থেকে ২৪ দিন বার্ষিক ছুটি থাকে। এছাড়াও থাকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। মোট ছুটি দাঁড়ায় প্রায় (২৪+১০৪) = ১২৮ দিন। প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় ছুটি থাকে ৭৫ দিন। সাপ্তাহিক ছুটি থাকে শুক্রবার। মোট ছুটি (৭৫+৫২) = ১২৭ দিন। বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ যেমন ১১ কমিটির সভা, খেলাধুলা, উঠান বৈঠক ও সরকারি নানা কাজে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেক ছুটি হারিয়ে যায়।
প্রতিবারের মতো এ বছরও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছুটির তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। ছুটির তালিকাটি সংশোধন করা না হলে প্রতিবারের মতো এবারও তথা ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সরকারি বিধিমোতাবেক তিন বছরের স্থলে চার বছরে পেতে যাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদনের জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিনের ছুটি দেয়া হয়। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিনের বাড়তি ছুটি দেয়া হয় না। শিক্ষকদের বার্ষিক ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি অথবা রমজানের ছুটিকে ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে দেখানো হয়। আরবি বছরে ৩৬৫ দিনের স্থলে ৩৫৫ দিন। রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি দেখানো হলে এই শিক্ষকরা চার বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে থাকবেন।
গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন দেখানো হলে বা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিন অতিরিক্ত ছুটি দেয়া হলে প্রাথমিক শিক্ষকরাও তিন বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত ২০১৫ সালের মতো ২০১৬ সালের ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি ছয়দিন রাখা হয়েছে। এতে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে দেখাতে বাধ্য হবেন।
এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাদের সময়মতো পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল কাশেম ফজলুল হকের আবেদনক্রমে ২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর গ্রীষ্মের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে ১৫ দিন রাখার জন্য অফিস আদেশ জারি করে। অথচ ওই আদেশ ২০১৫ সাল থেকে অকার্যকর হয়ে আসছে। অপরদিকে বিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতার জন্ম দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষের দিবসকে পালন করার জন্য বিদ্যালয় খোলা রাখা প্রয়োজন। এতে শিশুদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হবে। অথচ ছুটির তালিকায় ছুটি দেখিয়ে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদায় দিবসগুলো পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তালিকায় ছুটি থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেকটা দায়সারা গোছে যেনতেনভাবে দিবসগুলো পালন করে থাকে। সংশ্লিষ্টদের এহেন কর্মকাণ্ড অনেকটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পরিপন্থী।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতকরণ, আগামী প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ভালোভাবে জানানোর জন্য জাতীয় দিবসগুলো ছুটির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন রাখা কি অযৌক্তিক? প্রাথমিক শিক্ষকরা তালিকাভুক্ত ৭৫ দিনের বেশি ছুটি দাবি করেন না। উচ্চবিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ছুটি ৮৫ দিন।
প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রত্যাশা অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীর মতো সময়মতো বিধিমোতাবেক সমান সুবিধা পাওয়া। এ কোনো অযৌক্তিক দাবি নয়। এ হল তাদের অধিকার। তাদের চাওয়া শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সময়মতো পাওয়া এবং শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষকদের অধিকার। তাই আমরা ছুটির তালিকা সংশোধনের জন্য মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।
লেখক: মো. সিদ্দিকুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম।