প্রিয় শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র বঙ্গবন্ধু - দৈনিকশিক্ষা

প্রিয় শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র বঙ্গবন্ধু

অনুপম হায়াৎ |

জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯২০-১৯৭৫) জীবন, কর্ম, চিন্তাচেতনা, দর্শন ও মানস গঠনে বিভিন্ন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও প্রভাব রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, তাঁর পড়ার সাথি, খেলার সাথি, বন্ধু-বান্ধব ও বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষকদের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্য পাওয়া যায়। এসব ঘটনা ও তথ্য যেমন বাধ্যগত একজন ছাত্র তথা শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর পরিচয় বহন করে, তেমন একজন ভবিষ্যৎ মহামানবের ইঙ্গিতবাহীও।

বঙ্গবন্ধু কিশোর বয়স থেকেই লেখাপাড়া শুরু করেন পারিবারিক পরিবেশে পিতা-মাতা এবং গৃহশিক্ষকদের কাছে। পরবর্তীকালে তাঁর শিক্ষাজীবনে যোগ হয় প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি লেখাপড়া করেন টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা এমই স্কুল, গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমি, মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল, গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১.

বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিবেশে তাঁর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ও মাতা সায়েরা বেগমের তত্ত্বাবধানে। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা ও সচেতন ব্যক্তি। তিনি আদরের পুত্র খোকার (বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক নাম) জন্য বাড়িতে তিনজন শিক্ষক রেখেছিলেন। একজন ইসলাম ধর্ম শিক্ষার জন্য মৌলভি সাহেব, দ্বিতীয়জন সাধারণ শিক্ষার জন্য পণ্ডিত সাখাওয়াত উল্লাহ পাটোয়ারী, তৃতীয়জন কাজী আবদুল হামিদ। বঙ্গবন্ধু মৌলভি সাহেবের কাছে আমাপারা আর পণ্ডিত সাখাওয়াত উল্লাহর কাছে বাংলা বর্ণমালা ও নামতা পড়তেন এবং কাজী আবদুল হামিদের কাছে পড়তেন কবিতা-গল্প ইত্যাদি।১

শিক্ষক সাখাওয়াত উল্লাহ পাটোয়ারী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর নিকটাত্মীয়। তাঁর বাড়ি ছিল নোয়াখালীতে। তিনি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে লজিং থাকতেন। খেলাধুলা ও পড়ার সাথি শেখ আশরাফুল হক ওরফে আমিন মিয়া (১৯১৪-২০০৯ সূত্রে) ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চাচা এবং মামাও। তাঁরা একই সঙ্গে পড়তেন সাখাওয়াত উল্লাহ পাটোয়ারীর কাছে। লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি খুবই কঠোর ছিলেন। জিজ্ঞাসিত হলে কোনো প্রশ্নের জবাব না দিতে পারলে তিনি ছাত্রদের নানাভাবে শাস্তি দিতেন। একবার অসুস্থ অবস্থায় পড়া না দিতে পারায় পাটোয়ারী স্যার খুব জোরে থাপড় মারলে কিশোর মুজিব মাটিতে পড়ে গেলেও তাঁর প্রতি কোনোরূপ বেয়াদবি করেননি। শিক্ষকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাত্র মুজিব শ্রদ্ধা ও মান্যতার সঙ্গে মেনে নিয়েছিলেন। কিছুদিন পর পাটোয়ারী স্যার অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় তাঁর বিছানাপত্রের গাঁটটি নিজের মাথায় করে পাটগাতি পৌঁছে দিয়েছেন মুজিব।২

বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনের ‘আদর্শ’ ছিলেন শিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ। এই শিক্ষক তাঁকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিলেন, তা তিনি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—

‘১৯৩৭ সালে আবার আমি লেখাপড়া শুরু করলাম। এবার আর পুরোনো স্কুলে পড়ব না, কারণ আমার সহপাঠীরা আমাকে পেছনে ফেলে গেছে। আমার আব্বা আমাকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আমার আব্বাও আবার গোপালগঞ্জ ফিরে এলেন। এই সময় আব্বা কাজী আব্দুল হামিদ এমএসসি মাস্টার সাহেবকে আমাকে পড়ানোর জন্য বাসায় রাখলেন। তাঁর জন্য একটা আলাদা ঘরও করে দিলেন। গোপালগঞ্জের বাড়িটা আমার আব্বাই করেছিলেন। মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা “মুসলিম সেবা সমিতি” গঠন করেন, যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টি ভিক্ষার চাল ওঠাতেন সকল মুসলমান বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রবিবার আমরা থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার ও অন্যান্য খরচ দিতেন। ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। আমাকেই অনেক কাজ করতে হতো তাঁর সঙ্গে। হঠাৎ যক্ষ্মা রোগ আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তখন আমি এই সেবা সমিতির ভার নেই এবং অনেক দিন পরিচালনা করি। আর একজন মুসলমান মাস্টার সাহেবের কাছেই টাকা পয়সা জমা রাখা হতো। তিনি সভাপতি ছিলেন আর আমি ছিলাম সম্পাদক।’৩

বেবী মওদুদ সূত্রে এই শিক্ষক সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িত। তিনি বঙ্গবন্ধু পিতার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতা পড়ে শোনাতেন, ইতিহাসের গল্প শোনাতেন।৪

২.

বঙ্গবন্ধু শিক্ষকভক্তির অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ রেখেছেন টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা জিটি স্কুলের শিক্ষক বেজেন্দ্রনাথ সূত্রধরের বেলায়। বঙ্গবন্ধু এই স্কুলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। এই স্কুলে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন পাটপাতি এলাকার সৈয়দ নূরুল হক (১৯২০-?????)। সৈয়দ নূরুল হক সূত্রে জানা যায় ছাত্র-শিক্ষকের অপূর্ব মিলনের কথা।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেজেন্দ্রনাথ সূত্রধর ও সহপাঠী সৈয়দ নূরুল হককে ঢাকা আসার জন্য খবর পাঠান। সেই সূত্রে নির্দিষ্ট তারিখে তাঁরা দুজন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বঙ্গভবনের গেটে উপস্থিত হয়ে অনুমতিপত্র পাঠান। বঙ্গবন্ধু খবর পেয়ে সব নিয়মকানুন উপেক্ষা করে তাঁর স্কুলজীবনের শিক্ষকের কাছে ছুটে আসেন এবং স্যারের পায়ে ধরে সালামের পর বুকে জড়িয়ে ধরেন। তখন অভাবনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু খেলার সাথি মানিককেও জড়িয়ে ধরেন। বঙ্গবন্ধু সেই শিক্ষককে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ তাঁর অফিস কক্ষে। সেখানেও সৃষ্টি হয় বঙ্গবন্ধুর বদান্যতার আরেক দৃশ্য। তিনি শিক্ষককে নিয়ে নিজের চেয়ারে বসিয়ে উপস্থিত মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গর্ব ভরে বলেন, ‘আমার শিক্ষক।’ অতঃপর বঙ্গবন্ধু তাঁর স্কুলজীবনের শিক্ষক ও সহপাঠীর নানা খোঁজ-খবর নেন। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শিক্ষকের কাছে কিছু টাকা দেন তাঁর ঘর তোলার জন্য। এ ঘটনার পর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধু সারা দেশের শিক্ষকদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য তাঁদের চাকরি সরকারিকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।৫

৩.

বঙ্গবন্ধু ১৯৩৭ সালে যখন গোপালগঞ্জ খ্রিষ্টান মিশনারি হাইস্কুলে ভর্তি হন, তখন এ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন গিরিশ বাবু। গিরিশ বাবু ছাত্র মুজিবকে স্নেহ করতেন সাহসিকতা ও স্পষ্টবাদিতার জন্য। বঙ্গবন্ধুও শিক্ষক গিরিশ বাবুকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করতেন।৬

বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেন, তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। ওই সময় একজন মুসলমান ছাত্র অন্যায়ভাবে মারপিটের শিকার হয়। বঙ্গবন্ধু তখন স্কুলের শিক্ষক নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের কাছে বিষয়টির মীমাংসা চান। শিক্ষক নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত অন্যান্যের সহায়তা নিয়ে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে মিটমাট করেন। বঙ্গবন্ধু ওই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেন। ওই স্কুলে আর কখনো এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।৭

ওই স্কুলে বঙ্গবন্ধুর আরও দুজন শিক্ষকের নাম পাওয়া যায় তাঁর আত্মজীবনীতে। তিনি লিখেছেন—

‘১৯৪১ সালে আমি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেব। পরীক্ষায় পাশ আমি নিশ্চয়ই করব, সন্দেহ ছিল না। রসরঞ্জন বাবু ইংরেজির শিক্ষক, আমাকে ইংরেজি পড়াতেন। আর মনোরঞ্জন বাবু অঙ্কের শিক্ষক, আমাকে অঙ্ক পড়াতেন।’৮

এঁদের মধ্যে রসরঞ্জন সেনগুপ্ত খেলার প্রতিযোগিতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি। ১৯৪০ সাল থেকেই পিতা ও পুত্রের টিমের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে আসছিল। এই প্রতিযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর স্কুল টিম প্রায় সব খেলাতেই জয়ী হতো। এই পরিস্থিতিতে দুপক্ষের টিমের মধ্যে সমঝোতা হয়। এই সমঝোতায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন শিক্ষক রসরঞ্জন সেনগুপ্ত। সেই প্রসঙ্গে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু—

‘হেডমাস্টার বাবুর কথা মানতে হলো। পরের দিন সকালে খেলা হলো। আমার টিম আব্বার টিমের কাছে এক গোলে পরাজিত হলো।’৯

৪.

বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীতে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষাজীবন, শিক্ষক এবং সমকালীন রাজনীতি ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে অনেক মূল্যবান ও দুর্লভ প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে। তিনি ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা (প্রবেশিকা) দেন এবং উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা গিয়ে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—

‘… এই বৎসর আমি দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে বেকার হোস্টেলে থাকতাম।’১০

ইসলামিয়া কলেজে ছিল ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। স্পষ্টবাদিতা, সাহস, ন্যায্যতা, নিষ্ঠা, মানবিকতা ও সাংগঠনিক নেতৃত্বের কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালে মন্বন্তরের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ‘আত্মজীবনী’তে তিনি লিখেছেন—

‘বেকার হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন প্রফেসর সাইদুর রহমান সাহেব (বহু পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজের প্রিন্সিপাল হন) আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। হোস্টেল রাজনীতি বা ইলেকশনে আমার যোগদান করার সময় ছিল না। তবে তিনি আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। প্রিন্সিপাল ছিলেন ড. আই. এইচ. জুবেরী। তিনিও আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। যে কোনো ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে সোজাসুজি আলাপ করতাম এবং সত্য কথা বলতাম। শিক্ষকেরা আমাকে সকলেই স্নেহ করতেন। আমি দরকার হলে কলেজের অ্যাসেম্বলি হলের দরজা খুলে সভা শুরু করতাম। প্রিন্সিপাল সাহেব দেখেও দেখতেন না। মুসলমান প্রফেসররা পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করতেন। হিন্দু ও ইউরোপিয়ান টিচাররা চুপ করে থাকতেন, কারণ সমস্ত ছাত্রই মুসলমান। সামান্য কিছু সংখ্যক ছাত্র পাকিস্তানবিরোধী ছিল, কিন্তু সাহস করে কথা বলত না।’১১

তিনি আরও লিখেছেন শিক্ষকদের সম্পর্কে—

‘ছাত্রদের আপদে-বিপদে আমি তাদের পাশে দাঁড়াতাম। কোন ছাত্রের কি অসুবিধা হচ্ছে, কোন ছাত্র হোস্টেলে জায়গা পায় না, কার ফ্রি সিট দরকার, আমাকে বললেই প্রিন্সিপাল ড. জুবেরী সাহেবের কাছে হাজির হতাম। আমি অন্যায় আবদার করতাম না। তাই শিক্ষকেরা আমার কথা শুনতেন।

‘…ইসলামিয়া কলেজে গরিব ছেলেদের সাহায্য করবার জন্য একটা ফান্ড ছিল। সেই ফান্ড দেখাশোনা করার ভার ছিল বিজ্ঞানের শিক্ষক নারায়ণ বাবুর। আমি আর্টসের ছাত্র ছিলাম, তবু নারায়ণ বাবু আমাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি যদিও জানতেন, আমি প্রায় সকল সময়ই “পাকিস্তান, পাকিস্তান” করে বেড়াই। ইসলামিয়া কলেজের সকল ছাত্রই মুসলমান। একজন হিন্দু শিক্ষককে সকলে এই কাজের ভার দিত কেন? কারণ তিনি সত্যিকারের একজন শিক্ষক ছিলেন। হিন্দুও না, মুসলমানও না। যে টাকা ছাত্রদের কাছ থেকে উঠত এবং সরকার যা দিত, তা ছাড়াও তিনি অনেক দানশীল হিন্দু-মুসলমানদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে জমা করতেন এবং ছাত্রদের সাহায্য করতেন। এই রকম সহানুভূতিপরায়ণ শিক্ষক আমার চোখে খুব কমই পড়েছে।’১২

ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. জুবেরীও বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন। মন্বন্তরের সময় অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে বঙ্গবন্ধু অসুস্থ হলে অধ্যক্ষ মাঝেমধ্যে খবর নিতেন। বিএ পরীক্ষা দেওয়ার সময় অধ্যক্ষ বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা করেছিলেন, সে প্রসঙ্গে জানা যায় তাঁর আত্মজীবনী থেকে। তিনি লিখেছেন—

‘এই সময় মনস্থির করলাম, আমাকে বিএ পরীক্ষা দিতে হবে। ড. জুবেরী আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, “তুমি যথেষ্ট কাজ করেছ পাকিস্তান অর্জন করার জন্য। তোমাকে আমি বাধা দিতে চাই না। তুমি যদি ওয়াদা কর যে এই কয়েক মাস লেখাপড়া করবা এবং কলকাতা ছেড়ে বাইরে কোথাও চলে যাবা এবং ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বেই এসে পরীক্ষা দিবা, তাহলে তোমাকে আমি অনুমতি দিব।” তখন টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। আমি ওয়াদা করলাম, প্রফেসর তাহের জামিল, প্রফেসর সাইদুর রহমান এবং প্রফেসর নাজির আহমেদের সামনে।’১৩

পরবর্তী জীবনেও শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি অটুট ছিল। লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময়ও অধ্যাপক সাইদুর রহমানের পায়ে হাত দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখেছি।’১৪

৫.

নিজের শিক্ষক ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সমগ্র শিক্ষক সম্প্রদায়কে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন, অঙ্গ-সংগঠন, মন্ত্রিসভা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ-কমিটি, কমিশন ও প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক ও শিক্ষকদের নিয়োগ দান ও অন্তর্ভুক্তিতে। এ পর্যায়ে উল্লেখ করা যায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল ফজল, অধ্যাপক ইউসুফ আলী চৌধু্রী, অধ্যাপক মফিজ চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক আজিজুর রহমান মল্লিক, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক মজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, অধ্যাপক শিল্পী কামরুল হাসান, অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান প্রমুখের নাম। শ্রদ্ধাভাজন এসব শিক্ষকের কর্ম ও সাধনাকে রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের কল্যাণে কাজে লাগাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012457847595215