ফেসবুক গুগল টাকা নিচ্ছে হুন্ডি করে - Dainikshiksha

ফেসবুক গুগল টাকা নিচ্ছে হুন্ডি করে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

FB-GOOGLEঢাকার একটি বেসরকারি কম্পানির একজন ব্র্যান্ড ম্যানেজার তাঁর প্রতিষ্ঠানের হয়ে প্রতি মাসে ফেসবুক ও গুগলকে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

কিন্তু ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈধভাবে অর্থ লেনদেনের সুযোগ না থাকায় তিনি তাঁর আমেরিকাপ্রবাসী এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ওই অর্থ পরিশোধ করেন। তাঁর কম্পানির হয়ে ওই আত্মীয় ফেসবুক ও গুগলকে অর্থ পরিশোধ করে দেন। আর ওই ব্র্যান্ড ম্যানেজার ঢাকায় তাঁর আত্মীয়ের পরিচিত একজনকে সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে দেন। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে গত বছর প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ফেসবুক ও গুগলের অ্যাকাউন্টে হুন্ডি হয়ে প্রবেশ করেছে। চলতি বছর এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যবসারত কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যদি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। প্রযোজ্য ফি, কর ও চালানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা শাখারও অনুমোদন নিতে হবে। এ জন্য সরকার অনুমোদিত কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে বিদেশি কোনো মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি কোনো ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়া সংক্রান্ত এই ব্যাখ্যায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশন মিডিয়া ছাড়াও ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবও পড়ে।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান গুগল-ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয় না। ফলে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন ব্যবসা হলেও এ খাত থেকে কোনো রাজস্ব পায় না সরকার।

অথচ দেশের ভেতর কোনো গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হলে ১৫ শতাংশ উেস কর দিতে হয়, সঙ্গে রয়েছে ৪ শতাংশ রাজস্ব। কিন্তু বিদেশি মাধ্যমে নিয়ম মেনে বিজ্ঞাপন না দেওয়ায় কর ফাঁকির পাশাপাশি দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে যায়।বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে পাঁচ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে।

ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ছাড়াও এই বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খবর ও জ্ঞান-বিজ্ঞানসংক্রান্ত পোর্টালগুলো ভিজিট করে। আর এ সুযোগ নিচ্ছে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো বড় কম্পানিগুলো। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ভিজিটরদের ক্রেতা বানিয়ে বিভিন্ন কম্পানির বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তারা আয় করে নিচ্ছে শত কোটি টাকা। কিন্তু এ জন্য বাংলাদেশকে কোনো রাজস্ব পরিশোধ করছে না ফেসবুক, গুগল ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতারা। উল্টো এসব বিজ্ঞাপনের অর্থ হুন্ডি করে অবৈধ পথে বিদেশে নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিচ্ছে তারা।

দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট দেশি ও বিদেশি কম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈধ উপায়ে লেনদেনের সুযোগ নেই, তাহলে কিভাবে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন থেকে এই দুই প্রতিষ্ঠান অর্থ পেয়ে থাকে—এমন প্রশ্ন রেখে গত ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক পত্রিকাকালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে ফেসবুক ও গুগল কর্তৃপক্ষে দুটি ই-মেইল করা হয়েছে। তবে গত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক ও গুগল ই-মেইলের জবাব দেয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যারা ফেসবুক, গুগলসহ আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়, তারা কেউ-ই বৈধ পথে অর্থ পরিশোধ করে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও কোনো তথ্য নেই। বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে এনবিআর বলছে, অনলাইনে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন। এ বিষয়ে এখন কারিগরি দিকটি বোঝার জন্য এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যারা বিদেশে টাকা পাচার করছে, সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা।

এ বিষয়ে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অর্থপাচার সম্পর্কিত কমিটির আহ্বায়ক ড. মঈনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা শুধু ফেসবুক বা গুগলের এ ধরনের অর্থপাচারই নয়, সব ধরনের অর্থপাচারের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারি করছি। সক্ষমতার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। এ কারণে আমাদের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সময়মতোই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যবসারত প্রায় সব বিদেশি কম্পানিই ফেসবুক, গুগল ও গুগলের সহপ্রতিষ্ঠান ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেয়। শুধু বিদেশি বহুজাতিক কম্পানিই নয়, দেশের বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু এ জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমতি নেয় না। বিজ্ঞাপনের টাকা তারা বিকল্প ও অবৈধ পথে ফেসবুক, গুগলকে পরিশোধ করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার : বিটিআরসির হিসাবে বাংলাদেশে এখন পাঁচ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রতিদিনই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। অনলাইন বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জিএনআরের গবেষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে আট কোটি।

ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরেও অনলাইনে বিজ্ঞাপনের বাজার ছিল ২৫০ কোটি টাকার। চলতি বছর তা ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ বিজ্ঞাপন সরাসরি পোর্টালগুলোতে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। বাকি ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপনের মধ্যে ফেসবুক পায় ৩০ শতাংশ, গুগল পায় ২৫ শতাংশ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জিএনআর পায় ২০ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ অন্যরা পায়। ফেসবুক ও গুগলকে দেওয়া অর্থ পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। জিএনআর দেশীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের বিজ্ঞাপনদাতারা সরাসরি বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম মেনেই অর্থ পরিশোধ করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার আরো বাড়বে। ফলে এ খাতে এখনই সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। এ বিষয়ে অনলাইন বিজ্ঞাপনে দেশীয় সংস্থার মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান জিএনআরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিমউদদৌলা মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে বিজ্ঞাপনের বড় অংশ টিভি ও পত্রিকায় যাচ্ছে। কিন্তু পাঁচ কোটি পাঠক-দর্শক ইন্টারনেটে থাকায় আপনার পণ্যের পরিচিতি অনলাইনে থাকা দরকার। প্রতিবছরই অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার বাড়ছে। যেহেতু পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য এটি একটি বড় মাধ্যম, সে কারণেই এ খাতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া দরকার।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের বড় একটি সেবা খাতের বিদেশি কম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ও গুগলে বিজ্ঞাপনের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করে। বিজ্ঞাপনের অর্থ পরিশোধ করতে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাইরে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করে থাকে। আর ওই ব্যক্তিকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এমন বিদেশি ও দেশি কম্পানির সবাই এমনটি করছে।’

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও প্রিয় ডটকমের সম্পাদক জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘এটি একটি নিয়মের মধ্যে আসা দরকার। তা না হলে গুগল, ফেসবুকসহ অন্যান্য স্থানে বিজ্ঞাপন বাবদ কে কত টাকা দিচ্ছে তা সরকার বুঝতে পারবে না। নিয়মের মধ্য দিয়ে গেলে সরকারেরও জানা থাকবে, রাজস্বও আয় হবে। যারা অনুমতি না নিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া অবস্থান নেওয়া উচিত। কারণ কেউ যদি সিএনএন, বিবিসিতে বিজ্ঞাপন দিতে চায় তাহলে তাকে অনুমতি নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ফেসবুক, গুগলে বিজ্ঞাপন দিতে কেন অনুমতি নিতে হবে না?’

(খবর: দৈনিক কালের কন্ঠ, ১০ জানুয়ারি ২০১৬)

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069930553436279