স্কুল-কলেজের প্রথাগত শিক্ষা অর্জন করতে না পারলেও বেগম মুজিব স্বশিক্ষিত ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মায়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল, নিজে নিজে পড়াশোনা করতেন। মায়ের জন্য বই নিয়ে আসতেন আব্বা। পড়ার এবং শেখার অত্যন্ত আগ্রহ ছিল মায়ের, যেকারণেই সবসময় বই পড়াটা আমাদের একটা অভ্যাসই ছিল। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়া, এটা আমাদের বাসাতে একটা প্রথা ছিল এবং এ বিষয়ে আমার মায়ের সব থেকে বেশি আগ্রহ ছিল।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রেবেকা মোমেন।
ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিরা জানতো মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গমাতার বিশাল অবদান ছিল। তাই আমার মায়ের ওপরও তাদের আক্রোশ ছিল। এজন্য ঘাতকরা আমার মাকেও খুন করে। বাবার পাশে থেকে মা যদি ত্যাগ স্বীকার না করতেন তাহলে হয়তো আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না।
বঙ্গমাতা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার সম্পর্কে মানুষ খুব সামান্যই জানে। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে ও প্রচারবিমুখ ছিলেন। তাই বঙ্গমাতার অবদান লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে।
বঙ্গমাতাকে শোষিত-নিপীড়িত জনসাধারণকে মুক্তির চেতনায় জাগিয়ে তোলার সংগ্রামে স্বামীর পাশে থাকা সহযোদ্ধা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আম্মা অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আব্বাকে সহায়তা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে আমার আব্বা মায়ের মতন একজন সঙ্গী পেয়েছিলেন বলেই কিন্তু তিনি তার সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন। জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে, সব ভোগ-বিলাস বিসর্জন দিয়ে আমার বাবার পাশে থেকে এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন আমার মা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আম্মা জেলখানায় দেখা করতে গেলে আব্বা তার মাধ্যমেই দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর পেতেন। আব্বার দিক-নির্দেশনা আম্মা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছাতেন। আব্বা কারাবন্দি থাকলে সংসারের পাশাপাশি সংগঠন চালানোর অর্থ আম্মা যোগাড় করতেন। বাবাকে কখনও টানা দুবছরও আমাদের মাঝে পাইনি।