বদলি: এমপিও নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি সমীপে ২২ প্রস্তাব - দৈনিকশিক্ষা

বদলি: এমপিও নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি সমীপে ২২ প্রস্তাব

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম |

বাংলাদেশের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মাধ্যমে হলেও শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন কিংবা বদলির কোন সুযোগ নেই।  দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষকরা দেশের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করে যাচ্ছেন। দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারলাম এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, বৈষম্য দূরীকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  উক্ত কমিটি নীতিমালা সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করে থাকবেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করছি যৌক্তিক ও মানসম্মত একটি  নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করবেন।

এমপিও নীতিমালা- সংশোধন হতে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা এ নীতিমালার মাধ্যমে তাদের দৈন্যতা, সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য এর অবসানের দরজা খুলবে। এমপিও নীতিমালা ১৯৯৫  থেকে এমপিও নীতিমালা ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৮ এর বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ধারায় এমপিওভুক্ত  শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থার নির্দেশনা থাকলেও আজও পর্যন্ত বদলি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। 

সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু একান্ত জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমশ নিম্নগামীর পরিবর্তে ঊর্ধ্বগামী করতে, বিশ্ব মানের শিক্ষা অর্জন করতে বদলি ব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই। দৈনিক শিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারলাম সরকার ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় বদলি ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে সফটওয়্যার মাধ্যমে বদলি পদ্ধতি চালু করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও নীতিমালা সংশোধন ও পর্যালোচনা কমিটির প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি। । বদলি ব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকদের মধ্যে গতিশীলতা আসবে, দক্ষতা সম্প্রসারিত হবে নতুন পরিবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন শিক্ষক পেয়ে আনন্দ-উল্লাসের সাথে সুন্দর ও উপভোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দীর্ঘদিন একই জায়গায় একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের ফলে শিক্ষকদের একঘেয়েমি দূর হবে। শিক্ষকরা স্থানীয় পলিটিক্সে জড়াতে পারবে না এনং শিক্ষকদের এসিআর বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু হলে  শিক্ষকদের প্রাইভেট - কোচিং, গাইড ও নোটবাণিজ্য  বন্ধ হবে। শিক্ষকরা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করার ফলে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট দূর হবে যার ফলে শিক্ষার মান বাড়বে। অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ ; নীতি বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি, বহিষ্কার ও ম্যানেজিং কমিটির নির্যাতন কমবে। যার ফলে ভাল শিক্ষকের কদর বাড়বে, মেধাবী প্রার্থীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষকতায় ভাল শিক্ষক আসবে।ভাল মন্দ শিক্ষক বদলির মাধ্যমে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার সকল স্তরে  শিক্ষার মান সমন্বয় করা সম্ভব হবে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মান প্রায় সমান হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করার লক্ষ্যে  শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলি করা সহজ হবে এবং শিক্ষকদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পাঠদান বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, মেধা বিকাশ নিশ্চিত হবে। বদলি ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সকল স্তরের শিক্ষকদের চাকরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এমপিও নীতিমালা সংশোধন ও পর্যালোচনা কমিটিতে কোন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কিংবা শিক্ষক নেতাকে সদস্য হিসেবে না রাখা দুঃখজনক। তাই উক্ত কমিটিতে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কিংবা এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি সবিনয় অনুরোধ করছি।  এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে এমপিও নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করলাম। আশা করি লক্ষাধিক শিক্ষকদের প্রাণের দাবি বদলি ও ইনডেক্সধারী প্রার্থীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বিষয়ক প্রস্তাবটি শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার মাধ্যমে  সরকারের নজরে আসবে।

আমার প্রস্তাবসমূহ: 

১। বদলির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইন ভিত্তিক  ডিজিটাল ডিভাইসে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। ২। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে সমপদে যেকোন প্রতিষ্ঠানে বদলি হতে পারবেন।  ৩।  অফিস সহায়ক পদ থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষ পর্যন্ত সকল ইনডেক্সধারী বদলির জন্য বিবেচ্য হবে। ৪। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের আদেশে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান প্রধান তার প্রতিষ্ঠানের শুন্য পদের তথ্য রেজুলেশনের ৭দিনের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেবেন। ৫। উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রাপ্ত সমস্ত শুন্যপদ প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করবেন। ৬। জেলা শিক্ষা অফিস প্রাপ্ত সমস্ত শুন্যপদের তালিকা দশ দিনের  মধ্যে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবেন। ৭।কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে গণবিজ্ঞপ্তির পূর্বে  বদলির সার্কুলার জারি করবেন। ৮। বৈধ বিভাগীয় প্রার্থী দেশের যে কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।  ৯। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। ১০। আবেদনের সর্বনিম্ন যোগ্যতা হবে নিয়োগ থেকে ৬মাস বা এক বছর চাকরিকাল। ১১। এক আবেদনে ১০টি প্রতিষ্ঠানে বদলি হবার জন্য চয়েস দিতে পারবেন। ১২। আবেদন ফি হবে ৫০০ টাকা, টেলিটকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ১৩। এমপিও নীতিমালা ২০১৮এর ১৩ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে  ইনডেক্সধারী প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির জন্য আদেশ প্রাপ্ত হবেন।  ১৪। এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১১.৮ নং ধারা অনুসারে সমপদে  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সমস্কেলে যোগদান করলে পূর্বের অভিজ্ঞতা গণনা  হবে। ১৫। এমপিও  নীতিমালা ২০১৮ এর ১১ অনুচ্ছেদের ১০এর (ক)ধারা মোতাবেক ইনডেক্সধারী প্রার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠান চাকরি ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে- ১৬।ইনডেক্সধারী বৈধ প্রার্থীরা এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১১ অনুচ্ছেদের ১০এর (খ)ধারা মোতাবেক  সমপদে কিংবা উচ্চ পদে যোগদান করলে পূর্ববর্তী পদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারবেন না। ১৭। বদলির ক্ষেত্রে কোন মহিলা কোটা থাকবেনা। ১৮। বাছাই পর্ব শেষে কর্তৃপক্ষ ১মাসের মধ্যে ফল ঘোষণা করবেন। ১৯। সুপারিশ নয়,বরং কর্তৃপক্ষ বদলির আদেশ করবেন। ২০। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান শুধু তাকে গ্রহন করে এমপিও স্থানান্তরের জন্য কাগজ-পত্র দিবেন। ২১। নভেম্বর ৩০তারিখের মধ্যে বদলি প্রক্রিয়া শেষ করবেন। ২২।যোগদানের পর যোগদানকারী শিক্ষক-কর্মচারী ৭দিনের মধ্যে গ্রহনকৃত প্রতিষ্ঠান এবং পরিত্যাগকৃত প্রতিষ্ঠানের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

বদলির জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াঃ কোন পদে একাধিক আবেদনকারী হলে সে ক্ষেত্রে ৫০ নম্বরের মূল্যায়ন করার প্রস্তাব করছি। 

নম্বর বন্টন হতে পারে ১. চাকরির বয়সের ওপর ২০। ২. শিক্ষাগত সনদের ওপর ২০ নম্বর। ৩. নিবন্ধন সনদ/ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চাকরির লিখিত ও ভাইভা (নিয়োগ কালীন যে ইন্টারভিউ হয়েছিল) নম্বরের শতাংশ অনুযায়ী ১০ নম্বর।

প্রত্যেক আবেদনকারী তার আবেদনে উপরোল্লিখিত নম্বর বিভাজন করে দেখাবেন এবং সব সনদের মূলকপি স্ক্যান করবেন। কোনও তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ তার সিলেকশন বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারির থেকে  এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বদলি ব্যবস্থা চালুর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, চেয়ারম্যান, এমপিও নীতিমালা পর্যালোচনা ও সংশোধন কমিটি ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের বিনীত আবেদন। 

লেখক: মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, প্রভাষক ইংরেজি, সমষপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ও বদলি আন্দোলনের সদস্য-সচিব।  

আরও পড়ুন: 

অনুপাত প্রথা : সরকারি বনাম বেসরকারি শিক্ষক

 সহকারী মৌলভীদের দশম গ্রেড নয় কেন?

 অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওবিহীন ২৭ বছর

এমপিও নীতিমালায় কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033769607543945