বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান পালনের অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিকেলে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ভিসি। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি আজ থেকে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, ভিসি ড. ইমামুল হক দাবি করেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বিকেলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের নিয়ে চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে দুপুরে ভিসি’র একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত বৈকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিইউডিএস) আয়োজিত আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভিসি’র এ বক্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিকেলে ফের বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বৈকালীন অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসের কর্মসূচি উন্মুক্ত করার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ভিসি’র বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ বুধবার ফের লাগাতার আন্দোলনে নামবেন তারা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনরত আইন বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান রাজু বলেন, ভিসি বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বৈকালীন অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধ জানিয়ে দেয়। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারিসহ সকল জাতীয় দিবসগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সবার উন্মুক্ত অংশগ্রহণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বিকালের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফ্লাগস্টান্ডে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকদের স্ত্রীসহ চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরিশালের গণ্যমান্যদের নিয়ে এ চা-চক্রের আয়োজন করা হলেও শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য দুপুরের প্যাকেটজাত খাবার আবাসিক হলগুলোতে পৌঁছানো হয়। শিক্ষার্থীরা হলের দেয়া খাবার ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা চালায়। ভিসি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের রাজাকার বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় একটি কুচক্রী মহল তাদের স্বার্থের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় তারা সুবিধা করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
