বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার দাবি : শিক্ষা ক্যাডারে তীব্র প্রতিক্রিয়া - দৈনিকশিক্ষা

বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার দাবি : শিক্ষা ক্যাডারে তীব্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দুইজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার  আদেশে প্রত্যাহার দাবি করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র সদস্যরা। একই সাথে দুই বরখাস্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ফেসবুকে করা মন্তব্য যথাযথ না হওয়া ও দৃষ্টিকটু হওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে দু:খ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়ররা। ফেসবুকে দুই পক্ষ লিখলেও একপক্ষকে শাস্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু অন্যপক্ষকে শোকজও না করার বিষয়টি পক্ষপাতিত্বের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। দুই কর্মকর্তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার দাবি করা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দপ্তরের পরিচালক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।

গতকাল ২৭ মার্চ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের ফেসবুক গ্রুপে যৌথভাবে লিখেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অলিউল্লাহ মো: আজমতগীর, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির  সাবেক  সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক মো: মাসুমে রব্বানী খান ও স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য-সচিব সৈয়দ জাফর আলী।  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও ডাক্তার, পিপিইসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য ও ছবি প্রকাশ করার অভিযোগে ২৫ মার্চ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত দুইজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা হলেন, গফারগাও সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী ও বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক সাহাদাত উল্লাহ কায়সার। একই সাথে দুই শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে বরখাস্তের খবর জানা যায়। 

বরখাস্ত করার পরপরই ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু করেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। এর একদিন পর কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনেও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কর্মকর্তরা। তারা বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন। বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার দাবি করে গতকাল ২৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে একটি বিবৃতি দেয়ার খবর কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। 

আবার শিক্ষা প্রশাসনে হঠাৎ নাজিল হওয়া বেসরকারি রতন বরখাস্তের পক্ষে ফেসবুক স্টাটাস দেয়ারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, বেসরকারি কলেজের রতন কেন শিক্ষা ক্যাডারের নাক গলায়। রতন পলাতক বাড়ৈ সিন্ডিকেট প্রধান বাড়ৈর অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিতি। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, বরখাস্ত হওয়া দুইজন কর্মকর্তা শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অধিকার নিয়ে সোচ্চার। তারা শিক্ষা ক্যাডারে জনপ্রিয়। তাদের ভাষায়, ‘ফেসবুকে করা মন্তব্যের ভাষা একটু যেন কেমন হয়েছে।’ কিন্তু তাই বলে বরখাস্ত করা সমীচীন হয়নি মনে করেন ক্যাডারের অধিকাংশ কর্মকর্তা। তাদের মতে, বড়জোর শোকজ করা যেত। তারা বলছেন, নিজের শিক্ষক স্ত্রীকে পিটিয়ে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন আকতারুজ্জামান নামের শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। চাকরির বিধান অনুযায়ী  জেল খাটলে বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বরখাস্ত না হয়ে সেই কর্মকর্তা এখন শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের  উপপরিচালক পদে কর্মরত।  কিসের বিনিময়ে তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না?

প্রতিবাদী  শিক্ষকরা আরো বলেন, শিক্ষা ভবনে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারেরই কোনও কোনও বিতর্কিত কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তড়িঘড়ি করে ফেসবুকের মন্তব্যের স্ক্রীনশট জোগাড়, মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বরখাস্ত করিয়েছেন। এর পেছনে বেসরকারি রতনেরও হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। 

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের যৌথ বিবৃতি হুবহু এরকম: 

“পিপিই ব্যবহার নিয়ে ডাক্তারদের বঞ্চনা ও ক্ষোভ, তাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়া, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি ও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের প্রেক্ষিতে মিডিয়া বিভিন্ন নিউজ করে। সরকারের গোচরে আসায় সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এর বিরুপ প্রভাব পড়ে। এসব প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ ফেসবুকে মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ক্যাডারের দু'জন জুনিয়র সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে শিক্ষা ক্যাডারে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মন্তব্য যথাযথ না হওয়ায় ও ভাষা ব্যবহার কিছুটা দৃষ্টিকটু হওয়ায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি এমন মন্তব্য করার কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ফেবু এ অপর পক্ষের মন্তব্যগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ, সেগুলোও তীব্র আপত্তিকর ছিলো। সেসব মন্তব্যকারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা না নিয়ে  একপেশে ব্যবস্থা গ্রহণ শিক্ষা ক্যাডারসহ ২৬ ক্যাডার সদস্যদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এটি অভিপ্রেত নয়।

করোনা প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সফল করার জন্য সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা স্বল্প সময়ে প্রায় ৬০ টি কলেজে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে সাধারণ  কর্মজীবী ও শ্রমজীবী  মানুষের মাঝে বিতরণ করেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। আশা করছি, সারাদেশে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা কর্মরত রয়েছেন এমন ৩৩০ টি কলেজেই এটি সম্ভব হবে। এ ছাড়াও এসব কলেজে সীমিত পর্যায়ে মাস্ক তৈরি করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করছে। সহসাই বিষয়টি আরো গতি পাবে। এমতাবস্থায় শিক্ষা ক্যাডারের দু'জন সদস্যের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনার দাবি করছি। উল্লেখ্য, এরূপ পরিস্থিতি  শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষিসহসহ  ২৬ ক্যাডারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষা ক্যাডারের বেতন বৈষম্য, পদ আপগ্রেড, পদসোপানসহ বৈষম্য নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের নির্দেশনা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৪ সপ্তাহে সমাধানের সিদ্ধান্ত আজো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপে আংশিক অগ্রগতি হলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র সদস্যবৃন্দ সর্বোচ্চ ৪ গ্রেডের পদ হতে অসন্মানজনকভাবে ও বিরাট আর্থিক ক্ষতি মেনে অবসরে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সকল কর্মজীবী পেশাজীবী ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে, এ প্রত্যাশা করছি।  করোনা পরবর্তী শিক্ষা  পরিস্হিতি এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে আমাদের করণীয় নির্ধারনে শিক্ষা ক্যাডারের ১৭ হাজার সদস্য ঐক্যবদ্ধ।

জয় বাংলা
বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।

শুভেচ্ছান্তে
মো: মাসুমে রব্বানী খান, 
আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, 
অলিউল্লাহ মো: আজমতগীর,
সৈয়দ জাফর।”

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007498025894165