বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ শত বছরে পা রাখছে আজ ৯ আগস্ট। ১৯১৮ সালের এই দিনে বাগেরহাট পৌর শহরের হরিণখানা এলাকার এই কলেজের স্বীকৃতি দেয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য তখন এর নাম ছিল বাগেরহাট কলেজ। তবে এ উপলক্ষে বড় ধরনের কোনো আয়োজন নেই। শোভাযাত্রা বের করা হবে। হবে আলোচনা সভা। বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) রায় তৎকালীন হাবেলী পরগনার জমিদার, সাধারণ মানুষ ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের নিয়ে বাগেরহাট কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর অনুরোধে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ঋষি কামাখ্যা চরণ নাগ। তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করতে পারতেন। তিনি প্রায় ২২ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। কলেজটিতে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস ও সংস্কৃত বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হতো। পরবর্তী সময়ে বাংলা, অর্থনীতি, আরবি ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) খোলা হয়। পিসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বুলবুল কবির বলেন, শুধু জমিদার, বৃত্তবান শ্রেণি নয়; পিসি কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে এই অঞ্চলের নিম্নবিত্ত, সাধারণ মানুষের অবদানটাও অনেক বড়। সে সময়ে হরিণখানা এলাকার শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ বিনা পণে (মূল্যে) ১২ বিঘা জমি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য পিসি রায়ের হাতে তুলে দেন।
১৯৩৬-৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। তাঁর নির্বাচনী এলাকা ছিল বর্তমান বাগেরহাট অঞ্চল। তাঁর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র। পরে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দিতে বাগেরহাট কলেজের নামকরণ হয় প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজ। ১৯৬০ সালে এই কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। এ সময় বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় স্নাতক (পাস) কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। প্রায় ২০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজে বর্তমানে একাদশ-দ্বাদশসহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। শুরুতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকলেও কলেজটি পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসে। বর্তমানে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে। গত বছর পিসি কলেজ খুলনা বিভাগে অষ্টম ও সারা দেশে ৮৯তম হয়।
এই কলেজে অন্যান্যের মধ্যে শহীদ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ প্রমুখ শিক্ষকতা করেছেন। সরকারি পিসি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোস্তাহিদুল আলম বলেন, শোকের মাস আগস্ট হওয়ায় বড় ধরনের কোনো অনুষ্ঠান থাকছে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। পরে পিসি রায়ের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য প্রদান ও আলোচনা সভা হবে।