শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আট বছর যাবৎ প্রতি বুধবার বসে গরুর হাট। ফলে ওই দিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান ও শিক্ষার পরিবেশ।
২ আগস্ট বুধবার বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে মূল ভবনের বারান্দা পর্যন্ত হাটের বিস্তার। বিক্রির জন্য মাঠজুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে তিন শতাধিক গরু। এসব গরুর মলমূত্র ও বর্জ্য বিদ্যালয় মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চারদিকে দুর্গন্ধ। এ সময় বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। বিদ্যালয়ের কার্যালয়সহ শ্রেণিকক্ষগুলো ছিল তালাবদ্ধ। বারান্দাসংলগ্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল পেতে ইজারাদারের লোকজন টোল আদায় করছেন। মানুষ আর গবাদিপশুর পদচারণে বিদ্যালয় মাঠে কাদা থিক থিক করছে।
এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী প্রয়াত আনছার আলীর প্রচেষ্টায় চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কালিবাড়ী বাজারসংলগ্ন স্থানে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৪ ও ৬৫০ জন। বিদ্যালয়টির ঠিক সামনে ২৫ শতাংশ খাসজমি রয়েছে। এ জমিতে দীর্ঘদিন ধানের বাজার বসত। কিন্তু ২০০৯ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন এ জমিটি ধানের বাজারের পরিবর্তে গরুর হাট হিসেবে ইজারা দেয়। সেই থেকে প্রতি বুধবার এখানে গরুর হাট বসে আসছে। প্রথম দিকে সমস্যা না হলেও দিন দিন গরুর হাটটি বড় হতে থাকে। শেরপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা এ হাটে গরু নিয়ে আসেন।
হাটের নির্ধারিত জমিতে স্থানসংকুলান না হওয়ায় বর্তমানে গরু বিক্রেতারা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে তাঁদের গরুগুলো দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে হাটের দিন দুপুরের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ে। এ সময় তাদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রতি বুধবার বেলা তিনটা থেকে গরুর হাটটি শুরু হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুইটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়। বুধবার ছাড়া অন্য দিনগুলোয় সাধারণত বিদ্যালয় ছুটি হয় বিকেল চারটায়। কিন্তু বুধবার দিন হাট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চেঁচামেচি আর উচ্চৈ স্বরে গরুর ‘হাম্বা’ রবে বিদ্যালয়ে পাঠদান অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসব ঝামেলায় এ দিন বেলা দুইটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক আজগর আলী বলেন, গরুর হাট এবং বিদ্যালয় মাঠের মধ্যে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় প্রতি বুধবার হাটের দিন বিপুলসংখ্যক গরু বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়। হাটের কারণে ওই দিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষাসহ লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর আগে গরুর হাট ও বিদ্যালয়ের সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন তা ভেঙে ফেলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে গরুর হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
ইজারাদার কমল উদ্দিন বলেন, সরকারের নির্ধারিত জমিতে স্থানসংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁরা বিদ্যালয়ের মাঠে গরু রাখছেন। তবে বিদ্যালয়ের পরিবেশের ওপর যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তার জন্য হাটের পরদিন সকালেই বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
ইউএনও এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আবেদন পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।