বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ নীতিমালা প্রসঙ্গ - দৈনিকশিক্ষা

বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ নীতিমালা প্রসঙ্গ

মো. রহমত উল্লাহ্‌ |

RAHAMATULLAজাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতায় দেশে বিদ্যমান সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই প্রদান বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের একটি যুগান্তকারী সফল পদক্ষেপ।

বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে প্রতি বছরই প্রথম দিনে প্রায় সকল শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন বই। শুরু হচ্ছে শিক্ষা বর্ষের শুরুতেই পুরোদমে ক্লাস। লেখাপড়ায় মনোযোগ ও আগ্রহ বেড়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের।

এমতাবস্থায় সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, বিনামূল্যে বই বিতরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করছে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে, বিনামূল্যের সরকারি বই নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা টাকা দিবে কেন? কেউ যদি এই বইয়ের বিনিময়ে টাকা আদায় করে তো তা অবশ্যই অন্যায়। তাই এটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আমার জানামতে বিনামূল্যের সরকারি বই বিতরণের কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়নি; যা অনুসরণ করে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে এই শুভ কাজটি সম্পাদন করা যেতে পারে।

সম্ভবত সে সুযোগেই একেক প্রতিষ্ঠান একেক নিয়ম/ অনিয়ম করার সাহস পাচ্ছে এবং যে যার মত করে কথা বলছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে রিপোর্ট ও প্রতিবেদন।

সরকার থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী ক্লাসের হাজিরা খাতার ফটোকপি জমা নিয়ে প্রতি ক্লাসের ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে সেই হিসাবানুসারে প্রয়োজনীয় বই পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানে। নিঃসন্ধেহে এই ব্যবস্থাটি ভালো। প্রশ্ন হচ্ছে, এইভাবে প্রাপ্ত বই কাদেরকে প্রদান করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?

যারা এখনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা পুনঃভর্তি হয়নি তারাতো তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী নয়। তাদেরকে বই দেওয়া হলে তারা যদি এই প্রতিষ্ঠানে আর ভর্তি না হয় এবং সেই বই ফেরত না দেয় তো কীভাবে সেই প্রতিষ্ঠান হিসাব মিলাবে প্রাপ্ত ও বিলিকৃত বইয়ের? বিশেষ করে শহরে অবস্থিত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা বাসা বদল বা আরো ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কারণে যেহারে মোভ করে, তাতে ভর্তি বা পুনঃভর্তি না করে একজনকে বই প্রদান করা কি দায়িত্বশীল কাজ হবে?

শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা কিছুটা কম মোভ করে। তারা বেশিরভাগ শিক্ষকদের জানাশুনা থাকে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেহেতু ভর্তি বা পুনঃভর্তির জন্য তেমন টাকা নিতে হয়না; সেহেতু তাদেরকে দ্রুত ভর্তি / পুনঃভর্তি করে বিনামূল্যের সরকারি বই বিলি করা ততটা জটিল নয়। তারা যদি বইয়ের বিনিময়ে টাকা আদায়ের কোন অপকৌশল নেয় তো সেটি অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন প্রমান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাআবশ্যক।

কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি / পুনঃভর্তি ফি না নিয়ে, ভর্তি / পুনঃভর্তি না করে বই বিতরণ করা হলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সেসন চার্জ ও ভর্তি ফি দিতে গড়িমসি করে। একজনকে যদি ভর্তি বা পুনঃভর্তি না করে বই প্রদান করা হয় তো সবাই নিতে চাইবে এই সুযোগ। আর একবছর যদি এই সুযোগ পায় তো পরের বছর এটি চাইবে অধিকার হিসেবে। আরো বেশি ভেঙ্গে পড়বে বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণ ব্যাবস্থা।

এদিকে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত দেশের প্রায় নব্বই শতাংশেরও অধিক বেসরকারি শিক্ষকগণ যেখানে অপেক্ষায় থাকেন, ছাত্রছাত্রি ভর্তির সময়ে কিছু বেতন-ভাতা পাওয়ার; সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নির্ধারিত সেসন চার্জ সহ ভর্তি বা পুনঃভর্তি ফি আদায় করে তার পরই বই বিতরণ করতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই চাওয়া কি তাদের অন্যায়? এজন্য কি তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া চলে?

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী / অভিভাবকদের তো অজানা নয় যে প্রতি বছরের শুরুতেই তাদের গুনতে হয় পূর্ব নির্ধারিত ভর্তি বা পুনঃভর্তি ফি। তা হলে তাদেরওতো রাখা উচিত সেই প্রস্তুতি। যারা অক্ষম তাদের কথা আলাদা। আর যদি সরকার মনে করে সবাই অক্ষম বা সবাইকেই বিনা ভর্তি / পুনঃভর্তি, বেতন-ফি ব্যতীতই বিনামূল্যে বই দেওয়া উচিত তো সেই দায়িত্ব হতদরিদ্র বেসরকারি শিক্ষকদের উপর চাপানোর জন্য কৌশল না করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি করে দেওয়া ছাড়া উপায় কী?

শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হোক বা নাহোক, শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিনে শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে হাতে বিনা মূল্যে সরকারি বই বিতরণ নিশ্চিত করতে হলে এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই থাকতে হবে সুষ্ঠু নীতিমালা। আর সেই নীতিমালাটি হতে পারে এমন যে, ‘বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগেই পাঠিয়ে দিতে হবে বই এবং তাদের বার্ষিক / সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ সবাইকেই প্রদান করতে হবে নতুন বই।

অনুত্তীর্ণদেরকেও আবার প্রদান করতে হবে তার বিদ্যমান ক্লাসের নতুন বই। এই বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ইচ্ছা ও যোগ্যতানুসারে যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হতে পারবে বা বাড়িতে বসে থাকতে পারবে।’ সেক্ষেত্রে অবশ্য সরকারকে মেনে নিতে হবে প্রতি বছর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে বিলিকৃত বইয়ের লোকসান।

লেখক: মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053129196166992