প্রকৃতির অপরিমেয় সৌন্দর্যস্নাত বিধাতার এক বিস্ময়কর অপরূপ সৃষ্টি আমাদের এই বাংলাদেশ। অপরূপ বিস্ময়ের আধার এই বাংলাদেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশ্ব সমৃদ্ধির পথে। আর সমৃদ্ধির শীর্ষে অবতরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। কারণ যে দেশ যত বেশি উন্নত, সে দেশ তত বেশি শিক্ষিত। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে প্রথম সোপান। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর শিক্ষা জীবনের শুভ সূচনা করে দেয়।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নানা বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের মাধ্যমে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা। এক সময় এদেশে মক্তবের মাধ্যমে শিশুদের শেখানো হতো। এরপর ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও সকল শিশুরা শিক্ষার সমান সুযোগ পায়নি। কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার আলো। আজকের প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশু সমান ভাবে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার সুফল এখন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
এদেশের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে যিনি গভীরভাবে ব্যাকুল হয়ে ভাবতেন তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বপ্ন দেখতেন এক সোনার বাংলার, আলোকিত বাংলার। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি দেশকে উন্নত করতে হলে প্রথমে দেশটির জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করতে হলে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষাকে। প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন। এজন্য তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা না করে সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করেন। তাঁরই স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ হবে একদিন আলোকিত বাংলাদেশ এটাই আমার বিশ্বাস।
এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আলোকিত বাংলা তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় শপথ গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ২৬ হাজার ১১৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ সহকারি শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন স্কেল প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ভীতি দূর করা, আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলা এবং সকল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে চালু করেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও নান্দনিক বিকাশ তথা শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে চালু করেন আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। শিশুদেরকে প্রাথমিক শিক্ষার যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সৃষ্টি করেন ৩৭ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ। উক্ত শ্রেণিকক্ষের জন্য নিয়োগ দেন ৩৭ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যাপক অবদানের পাশাপাশি আমাদের সকলের ক্ষুদ্র প্রয়াস তাঁর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রবল ভুমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি আগামীর প্রাথমিক শিক্ষা এক নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে। আজ আমি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসাবে নিজেকে গর্বিত মনে করি এবং একই সাথে সেই মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানাচ্ছি সশ্রদ্ধ সালাম।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা আজ বাংলাদেশে একটা অবস্থান করে নিয়েছে। আজকের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে বাংলাদেশসহ আর্ন্তজাতিক পরিম-লে নেতৃত্ব দিবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণায় শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্মোচিত হয়েছে নব দিগন্তের দ্বার, সূচিত হয়েছে নবজাগরণ। এই নবজাগরণ আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে পৌঁছে দিবে বিশ্বের দরবারে।
শিক্ষার সূতিকাগার হিসেবে দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে আজ প্রাথমিক শিক্ষার জয়জয়কার। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে আজ শিশুরা স্বপ্ন দেখে এক নতুন জগতের। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এখন কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষাভীতিকে দূর করতে পেরেছে, যা তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতে কলমে শিক্ষার মাধ্যমে চলছে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের অগ্রগামী প্রচেষ্টা। শিশুরা যেন তাদের সার্বিক বিকাশের পাশাপাশি সৃজনশীল, বিজ্ঞানমনস্ক, দেশত্ববোধে ও উন্নত জীবনের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশ্ব সম্ভাবনার পথে। ভবিষ্যতের প্রাথমিক শিক্ষা হবে মানসম্মত, যুগোপযোগী, টেকসই ও তথ্যনির্ভর।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লবের পর বর্তমান পৃথিবী নতুন এক বিপ্লবের মুখোমুখি হতে চলেছে যার নাম তথ্য বিপ্লব। বর্তমান শতাব্দীর গ্লোবালাইজেশনের ফলে একটি দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি অন্যতম নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। এই তথ্য বিপ্লবের পথযাত্রী হয়ে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আমি প্রত্যাশা করছি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিশ্চিত হবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল কর্মকা- হবে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। আজকের প্রাথমিক শিক্ষা একদিন তার সমস্ত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে শিক্ষার নবজাগরণ ঘটিয়ে উন্মোচন করবে বিশ্ব দরবারে নতুন সম্ভাবনার পথ। আর এই নব পথের এক বলিষ্ঠ, একনিষ্ঠ সহযাত্রী হয়ে নিবিড়ভাবে নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখব প্রাথমিক শিক্ষাকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য-এটাই আমার অঙ্গীকার।
লেখক: মু. সাইদুর রহমান স্বপন
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
বাউফল, পটুয়াখালী।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]