প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। উন্নয়নের স্পর্শ লেগেছে বাংলাদেশেও। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি বদলে দিচ্ছে সেবার মান ও চিত্র। তারই ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উপবৃত্তি প্রদান প্রক্রিয়ায় এসেছে পরিবর্তন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের সকল মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উপবৃত্তি বিতরণ শুরু হয়।
অভিযোগ ছিল শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তারা দুর্নীতি করে গরীব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এটি বন্ধ করার জন্য যাত্রা শুরু হয় শিক্ষার্থীদের মোবাইল একাউন্টে উপবৃত্তি প্রদান প্রক্রিয়া। এটি নি:স্বন্দেহে একটি যুগোপযোগী এবং অত্যাধুনিক প্রক্রিয়া।
সমস্যা হচ্ছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক উপবৃত্তি প্রদান করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বা শিক্ষার্থীর নিজ নামে একাউন্ট চালু করে এবং নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। বিষয়টি ঠিকঠাক মনে হলেও মূল সমস্যা হচ্ছে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে।
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষগুলো এখনো অতটা আধুনিক হয়নি যতটা তারা চিন্তা করছে। দেখা গেছে একজন অভিভাবক মোবাইল একাউন্ট খোলার এক মাস পরে তার প্রদত্ত পিন নম্বরটি ভুলে গেছে। তিন বারের বেশি পিন নম্বর দিলে তাদের একাউন্ট ব্লক হয়ে যায়। এবার তারা পিন নাম্বার উদ্ধার করার জন্য অন্যের স্মরনাপন্ন হয়ে অফিসে ফোন করে তার সমাধান করতে হয়। এতে তার মোবাইলের যা টাকা থাকে, তাও উধাও হয়ে যায়। পাবে সে ৬০০ টাকা মোবাইলেই ১০০ টাকা শেষ!
আবার কোন কারণে কোন অভিভাবক মোবাইলের সিমটা রিপ্লেস করেন, তাহলে তার একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এটা খোলার জন্য ওই অভিভাবক/একাউন্টধারীকে জেলা সদরে অবস্থিত তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অফিসে গিয়ে আনলক করে আনতে হয়। এতে জেলা সদরে যেতে তাদের মোট খরচ পরে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। সরকার তাকে দিচ্ছে ৬০০ টাকা। কিন্তু তাদের জটিলতা সমাধান করতে খরচ হচ্ছে ১০০০ টাকা। বিষয়টি কতটুকু হাস্যকর এবং বিড়ম্বনার। সে যদি তার সিমটি পাঁচবার রিপ্লেস করে তাহলে পাঁচ বারই তাকে জেলা সদরে গিয়ে একাউন্ট সচল করে আনতে হবে।
যারা সচেতন বা একটু চালাক-চতুর, তারা হয়তো কাজটি সঠিকভাবে করতে পারছেন। কিন্তু যারা অতটা সচেতন নন, তাদের টাকাগুলো কার পকেটে যাচ্ছে? তাদের এই পদ্ধতিগত সমস্যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে পারেনি বা পারছেনা। যদিও এটা ঠিক তাদের টাকা তাদের নিজ নিজ একাউন্টে জমা পড়ে আছে । কিন্তু তাতে কি আসে যায়? যাদের নুনে আনতে পান্তা ফুরায় তাদের টাকা ব্যাংক একাউন্টে পড়ে থেকে লাভ কি?
শিক্ষক, আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]