বেতন নিয়ে স্বস্তির বদলে অস্থিরতা - Dainikshiksha

বেতন নিয়ে স্বস্তির বদলে অস্থিরতা

শরিফুজ্জামান ও মোশতাক আহমেদ |

salaryশতভাগ বেতন বাড়লেও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়া এবং চাকরির শুরুর পদে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের চেয়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল এক ধাপ ওপরে রাখায় প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া প্রায় সব পর্যায়ে অসন্তোষ, অস্থিরতা ক্রমে বাড়ছে। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে শিক্ষকসহ অন্য পেশাজীবীদের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্দোলন। ১৫ জানুয়ারি থেকে গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী; বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও অসন্তুষ্ট। প্রজাতন্ত্রের ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ব্যাংক, বিমা, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ২১ লাখ জনবলের একটি বড় অংশ এখন পর্যন্ত ক্ষুব্ধ বা অসন্তুষ্ট। তবে এঁদের মধ্যে এমপিওভুক্ত (বেতনের শুধু সরকারি অংশ পাওয়া) পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষকের অসন্তোষ কমেছে।

আন্দোলনে থাকা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৭ জন, সরকারি কলেজশিক্ষক (শিক্ষা ক্যাডার) প্রায় ১২ হাজার। এ ছাড়া প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ ২৬ ক্যাডারে আছেন প্রায় ১ লাখ। এর বাইরে প্রশাসন ক্যাডারে আছেন ৫ হাজার ৪৫১ জন কর্মকর্তা, যাঁদের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্রের মত হচ্ছে, প্রায় শতভাগ বেতন বাড়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যে স্বস্তি আসার কথা ছিল, তার চেয়ে অস্বস্তির মাত্রা বেশি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও অসন্তোষের বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসনে অসন্তোষ কমিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চারজন সচিব গতকাল বৃহস্পতিবার নিজেরা বৈঠকে বসেন। এরপর তাঁরা আন্দোলনরত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে গতকাল রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে তাঁদের।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসনসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধান হবে।

বৈঠকে উপস্থিত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির একাধিক নেতা বলেন, সচিবেরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালুর বিষয়টি নাকচ করে পদোন্নতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা জানিয়েছেন। এ জন্য অধিদপ্তরগুলো পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। মন্ত্রণালয় পরবর্তী সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। জনপ্রশাসন পরের চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পদোন্নতির জট ছাড়ানোর চেষ্টা করবে। এ ছাড়া ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের গ্রেড সমস্যা নিরসনে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও ওই নেতারা জানান।

আন্দোলনরত শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ অন্যান্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, আমলাতন্ত্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজনের কারণে তাঁরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তবে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হবে বলে তাঁরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

প্রশাসন ক্যাডারের বিপক্ষে অন্য প্রায় সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবস্থান নেওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য। তিনি গত সোমবার কয়েকজন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং অগ্রাহ্য করে অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ জন্য অভিযুক্ত আমলাদের বিচার দাবি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্যসহ বিভিন্ন অসংগতি চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনের পরামর্শ দিয়েছিল।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ, সচিব কমিটির সুপারিশ এবং মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সারসংক্ষেপেও ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্য ছিল না। এমনকি সপ্তম বেতন স্কেলেও চাকরি শুরুর পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার সবাই নবম ধাপেই ছিলেন। অষ্টম বেতন স্কেলে এসে ক্যাডারদের এক ধাপ এগিয়ে অষ্টম ধাপে ফেলা হয়, নন-ক্যাডাররা নবম ধাপেই থেকে যান।

সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড রয়েছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন ক্যাডারে পদোন্নতির জট যেমন আছে, তেমনি আছে পদের অভাবও। এত দিন অনেকে পদোন্নতি না পেলেও সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল থাকার কারণে উচ্চতর গ্রেডে যেতেন।

নতুন বেতন স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে আপত্তি ও অস্পষ্টতা আছে।

সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ায় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কার্যত তৃতীয় গ্রেড থেকেই তাঁদের অবসরে যেতে হবে। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এ যাওয়ার সুযোগ পাবেন, তবে সেই সংখ্যা আগের তুলনায় কমবে।

এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অধ্যাপকের ২৫ শতাংশ সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-১-এ যেতে পারতেন। শিক্ষকেরা সপ্তম বেতন স্কেলের মতো সব সুবিধা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল তাঁরা দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বেতন নিয়ে সৃষ্ট সংকটের জন্য কয়েকজন আমলাকে দায়ী করে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিচার দাবি করেছেন। এ ছাড়া দাবি না মানলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও জানান তিনি।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা (বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা) চতুর্থ গ্রেড থেকেই অবসরে যাবেন। এত দিন ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-৩-এ যেতে পারতেন। এখন পদ অবনমন হওয়ার প্রতিবাদে তাঁরাও আন্দোলনে আছেন। নিয়োগবিধি ও পদোন্নতি বিধিমালা সংশোধন করে তাঁদেরও আগের মতো গ্রেড-৩-এ যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কলেজশিক্ষকেরা বলছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করে এখনই বলে দিতে হবে, গত ১ জুলাই থেকেই তাঁরাও গ্রেড-৩-এ যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, দাবি পূরণ না হলে ২২ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় শিক্ষকেরা নতুন কর্মসূচি দেবেন। ইতিমধ্যে কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকেরা।

প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারাও আন্দোলনে আছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গতকালও কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া উচিত নয়। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার বৈষম্য করাটাও ঠিক হয়নি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আগের অবস্থানে রাখাটাই যৌক্তিক। এমনকি জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য করা বিশেষ গ্রেডে অধ্যাপকদের কয়েকজনকে রাখা উচিত। ওই গ্রেডে এখন কয়েকজন সচিব ছাড়াও পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা আছেন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076708793640137