করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত প্রধান পলাতক আসামি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। বোরকা পরে একটি নৌকায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (১৫ জুলাই) ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) সুজয় সরকার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, তিনি নৌকায় পালিয়ে ছিলেন। তাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে সকাল আটটায় একটি হেলিকপ্টার সাহেদকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
সকাল আটটায় সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব জানায়, শাহেদ বোরকা পরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি ঘনঘন তার স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। একটি নৌকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনি তার সাদা চুল কালো করে ফেলেছেন ভারতে গিয়ে চুল কামিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
র্যাব আরও জানায়, একটি নৌকায় তিনি অবস্থান করছিলেন। নৌকায় একজন মাঝি ছিল। তিনি সাঁতরে পালিয়ে গেছেন।
র্যাবের মতে, প্রতারণার জগতে সাহেদ আইডল। প্রতারণাকে কিভাবে ব্যবহার করে সরল সাধারণ মানুষের সাথে ঠকবাজি করে কিভাবে একটা পর্যায় আসা যায় তার অনন্য দৃষ্টান্ত সাহেদ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে গত কয়েকদিনের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তি এই সাহেদ করিম। ইতোমধ্যে সাহেদের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলার খোঁজ পেয়েছে র্যাব।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এই রোগের চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতাল। তবে তাদের পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার প্রমাণ পেয়ে গত ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় র্যাব। সিলগালা করে রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ও। এরপর দিন ৮ জুলাই চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাটিও সিলগালা করে দেয় র্যাব। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, চেয়ারম্যান সাহেদ নিজেই এসব ডিল করতেন। অপকর্মগুলো রিজেন্ট গ্রুপের হেড অফিস থেকে সম্পাদিত হতো।
হাসপাতাল দুটো থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা না করেই আরও তিন গুণ লোকের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরি করেছে। কোন ভাইরাসের পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার বিষয়টি দেশে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে।