ভারতের মহারাষ্ট্রে পাঠ্যবই থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ - Dainikshiksha

ভারতের মহারাষ্ট্রে পাঠ্যবই থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

ভারতের বিখ্যাত ‘মুঘলসরাই’ রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের পর এবার মহারাষ্ট্রে স্কুলের পাঠ্যবই থেকেও মুঘল আমলের ইতিহাস অনেকটাই মুছে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপি-শাসিত ওই রাজ্যে সপ্তম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখন থেকে মুঘল ইতিহাসের বদলে মারাঠা বীর শিবাজী মহারাজের কাহিনীই বেশি করে পড়বে।

বিরোধী দলগুলো বলছে, এটা ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘল শাসনের পর্বটাই মুছে দেওয়ার চেষ্টা – যদিও বিজেপি এর মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছে না। বরং মুঘল শাসনেররও আগে ভারতের যে ‘গৌরবের ইতিহাস’ আছে, পাঠ্যবইতে সেটার ওপরই জোর দেওয়ার কথা বলছে তারা।

ভারতীয় রেলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে মুঘলসরাই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন – এশিয়ার সবচেয়ে বড় রেল ইয়ার্ডও আছে এখানেই।

দিল্লি-কলকাতা রুটের মাঝপথে এই স্টেশনটির নাম বদলে বিজেপির তাত্ত্বিক গুরু দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে – গত সপ্তাহে সে কথা জানাজানি হওয়ার পরই পার্লামেন্টে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন বিরোধী সদস্যরা।

সেই বিতর্ক না-থিতোতেই এখন জানা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্রের স্কুল শিক্ষা পর্ষদ তাদের ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে মুঘল জমানার অধ্যায় প্রায় পুরোটাই ছেঁটে ফেলেছে – তার জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কংগ্রেস জমানার বফর্স কেলেঙ্কারি, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা এবং আরও বেশি করে শিবাজী মহারাজের বীরগাথা।

কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের মতে, এগুলো ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোণঠাসা করার ন্যারেটিভেরই অংশ।

তিনি বলছেন, “আফশোস এখানেই – মুঘলসরাই স্টেশন ভারতের ইতিহাসের একটা অংশ – কিন্তু এখন এরা বলার চেষ্টা করছেন মুসলিমরা আসলে ভারতীয়ই ছিলেন না। সেই আমলে আমরা ছিলাম গোলাম, আর সেই ইতিহাসই এরা পাল্টাতে চান। ভারতীয় মুসলিমদের বিজাতীয় প্রমাণ করার যে যুদ্ধে তারা নেমেছেন, এগুলো তারই হাতিয়ার।”

বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহার অবশ্য বলতে দ্বিধা নেই, মুঘল জমানার ইতিহাস ভারতের আসল ইতিহাসই নয়।

তিনি  বলছিলেন, “বাবর-আকবর-হুমায়ুন দেশ নয়। তারা আক্রমণকারী, বাইরে থেকে এসে এ দেশ শাসন করেছে। তো সেই মুঘল ইতিহাস বা ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতার ইতিহাস যদি পড়ানো হবে, মুঘলদের আগের ইতিহাস কেন পড়ানো হবে না? কেন শুধু আমরা গত সাতশো বছরেই আটকে থাকব?”

“আমার প্রশ্ন হল, ভারত তো শুধু সাতশো বছরের দেশ নয় – অনেক প্রাচীন দেশ। আজকের বহু সভ্য দেশ যখন অসভ্য ছিল, তখন থেকেই এখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা চলছে। সুতরাং আমরা মনে করি ভারতবাসী যদি পূর্বপুরুষদের সেই গৌরবের ইতিহাস জানতে পারে, দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। “

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুঘল যুগের ইতিহাস পড়ান অধ্যাপক শিরিন মাসুদ – তিনি কিন্তু সতর্ক করে দিচ্ছেন নতুনভাবে এই ইতিহাস লেখার চেষ্টা আর রাস্তা-স্টেশনের নামবদলের বিপদ সম্পর্কে।

তার কথায়, “মহারাষ্ট্রে পাঠ্যপুস্তকে বদল নিয়ে বলা হচ্ছে, স্থানীয় ইতিহাসও স্কুল পর্যায়ে ছাত্রদের জানা দরকার। বেশ মানলাম, কারণ সর্বভারতীয় স্তরে স্থানীয় ইতিহাস তেমন জানার সুযোগ নেই। কিন্তু এভাবে দেশের প্রতিটা অঞ্চল যদি তাদের স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ইতিহাসকে দেখতে শুরু করে সেটা কিন্তু আখেরে মোটেই ভাল হবে না। “

“আর এই যে নাম বদলের প্রবণতা – যেভাবে আগে আওরঙ্গজেব রোডের নামও বদলানো হয়েছে – এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো জুড়েই কিন্তু বড় আকার নেয়। একটা স্তরে আপনি বলতে পারেন এর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কিংবা বলতে পারেন পুরনো অন্যায়ের প্রতিকার করছি – কিন্তু কীভাবে আপনি ঐতিহাসিক তথ্য বা বাস্তবতাকে অস্বীকার করবেন?”, বলছিলেন ড: মাসুদ।

কংগ্রেস আমলেও দিল্লির বিখ্যাত কনট প্লেসের নাম বদলে রাখা হয়েছিল রাজীব চক। সেই দৃষ্টান্ত দিয়ে বিজেপি আবার প্রশ্ন তুলছে, কেন বিরোধীদের আপত্তি শুধু মুঘলদের স্মৃতিজড়িত নাম বদলানোতেই?

রাহুল সিনহার কথায়, “ব্রিটিশ আমলের নাম বদলে ভারতীয় লোকের নামে রাখলে যদি অসুবিধা না-থাকে, তাহলে মুঘল আমলের নাম বদলালে অসুবিধা কোথায়? অসুবিধা এখানেই যে ওতে ভোটের সুড়সুড়ি আছে। “

“ব্রিটিশদের নাম ফেলে দিতে কোনও অসুবিধা নেই, কারণ ইংরেজের নামে এ দেশে কোনও ভোট নেই। কিন্তু মুঘলদের নাম ফেলতে গেলেই ত্রাহি-ত্রাহি রব উঠবে, কারণ তখন ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে একটা সম্প্রদায়ের ভোট আদায় করা যাবে না”, বলছেন মি সিনহা।

ইতিহাস বলে, ভারত প্রায় ৭৬৬ বছর মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। একুশ শতকের ভারতে এখন সেই পর্বটাকেই ম্লান করে দেওয়ার সচেতন চেষ্টা চলছে – আর স্পষ্টতই তার পেছনে আছে ধর্মীয় রাজনীতির অঙ্ক।

– বিবিসি বাংলা

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066349506378174