ভার্সিটির সান্ধ্য কোর্স হুট করে বন্ধ নয়, নতুন শিক্ষার্থীও নয় - দৈনিকশিক্ষা

ভার্সিটির সান্ধ্য কোর্স হুট করে বন্ধ নয়, নতুন শিক্ষার্থীও নয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মো. আবদুল হামিদের উদ্বেগের পর এ কোর্স বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আদেশ জারি কেন্দ্র করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ‘সান্ধ্য’ কোর্সের শিক্ষার্থীরা। ইউজিসির আদেশের পর প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বর্তমান শিক্ষার্থীদের কি হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বা কীভাবে সরকারের এ আদেশ কার্যকর করবে? তবে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, হুট করে বন্ধ নয়। যারা অধ্যয়নরত আছেন তাদের কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আমরা বলছি আর নতুন কোন শিক্ষার্থী যেন ভর্তি করা না হয়।  শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এর আগে গত সোমবার প্রথম ঢাবির সমাবর্তনে এসে সান্ধ্য কোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন ডিপার্টমেন্ট, সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। নিয়মিত কোর্স ছাড়াও এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এরপর বুধবারই সান্ধ্য কোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে উল্লেখ করে ইউজিসি এ কোর্স বন্ধের আদেশ জারি করেছে। আর আদেশ জারির পরই বিভিন্ন মাধ্যমে একে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্সের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারের ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকদের একটি অংশ বিপুল অর্থে এ কোর্সের পক্ষে থাকলেও অনেক শিক্ষক সরকারের ঘোষণাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তবে এ স্বস্তির বাইরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স ও ছুটির দিনের কোর্সের নামে চলা শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ঢাবির বাণিজ্য অনুষদের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী আফসান বৃহস্পতিবার সকালে নিজেই এ প্রতিবেদককে তার সেলফোন থেকে কল করে বলেন, ‘ইউজিসি যে আমাদের ইভিনিং শিফট বন্ধের আদেশ দিয়েছে এখন আমাদের কি হবে? যারা লেখাপড়া করছেন তাদের বিষয়ে তো কিছু বলেনি।’ ওই শিক্ষার্থী আরও প্রশ্ন করেন, ইউজিসির আদেশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু বলেছে? যারা পড়ালেখা করছেন তাদের কার্যকম চলবে জানালে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ইউজিসি তো আদেশে কোর্স বন্ধ করতে বলেছে। বিষয়টি একটু পত্রিকায় লিখুন বলে কিছুটা আশ্বস্ত হন ওই শিক্ষার্থী। তবে একই সঙ্গে বলেন, আমার মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ নিয়ে চিন্তিত।

কথা হয় রাবির সান্ধ্য কোর্সের ছাত্রী নওরীনের সঙ্গে। তিনিও চিন্তিত। জানালেন, শিক্ষকরা বলেছেন, যারা লেখাপড়া করছে তাদের চিন্তার কিছু নেই। তবে এ কোর্সের ভবিষ্যত নিয়ে আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। ওই আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ সাহা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে নই। তবে সরকারের আদেশের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স অন্যভাবে কার্যকর। এখানে সন্ধ্যায় না হয়ে একই চেহারায় ‘উইকেন্ড’ কোর্স নামে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে চলে এ শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারের আদেশের পর এখনও এ বিষয়ে এখানকার কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এ বিশ^বিদ্যালয়েও বাণিজ্যনির্ভর এ শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।

অবশ্য সরকারের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। সব সময় বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্সের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকা ঢাবির আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্সের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো নিয়মিত যারা গ্র্যাজুয়েট, যারা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অনার্সে ভর্তি হন, তাদের প্রকৃত মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকার শ্রম মেধা ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা।

রাতের বেলায় ইভিনিং কোর্স পরিচালনার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোন কোন অনুষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদহানি করছে এ অভিযোগ ছিল সব সময়। শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সময় দিতে পারছে না বলে ক্ষোভ ছিল সবসময়ই।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সময় ও মেধা প্রয়োগ করতে পারছে না। ফলে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইভিনিং প্রোগ্রাম ধীরে ধীরে বন্ধ করে এবং আজকের আদেশের পর কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ঢাবির অনেক ইভিনিং প্রোগ্রামের সার্টিফিকেটে ‘ইভিনিং’ লেখা থাকে না। তারা ঢাবির সার্টিফিকেট নিচ্ছে বটে, কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য যে নিয়মনীতি আছে, সেগুলো ইভিনিংয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মান রক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, আমরা বলেছি সান্ধ্য কোর্স বন্ধের জন্য। কারণ সান্ধ্য কোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে পারে না। যারা লেখাপড়া করছেন তাদের কি হবে- এমন প্রশ্নে আদেশের ব্যাখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তাদের বলছি নতুন কোনো শিক্ষার্থী যেন ভর্তি না করে। তারা যেন এ কার্যক্রমে আর সামনের দিকে না এগোয়। নতুন ভর্তি না করা হলেই পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে গত মে মাস থেকেই ঢাবিতে এ কোর্স বন্ধের কাজে হাত দেয়া হয়েছে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন. ’১৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি একটি অনুশাসন দিয়েছিলেন। সেভাবে আমরা কাজ শুরুও করেছি। তবে আমাদের উদ্যোগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির সদয় দৃষ্টিতে ছিল না।

ইউজিসি চেয়ারম্যান নতুন ভর্তি না করার কথা বলেছেন। এতে ধাপে ধাপে এ কোর্স বন্ধ হয়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় তো কোন ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাই ঢাবির কোন বিভাগ বা কোর্স হঠাৎ করে খোলা বা বন্ধ করা হয় না। এজন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতির অনুশাসন অনুযায়ী গত মে মাসে বিভিন্ন নামে পরিচালিত সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে ডিনদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে অভিমত দেবেন। বন্ধ করা হলে সেটি কবে থেকে সে বিষয়েও মতামত দেবেন তারা। ওই আলোকে ক্রমান্বয়ে সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ঢাবির সান্ধ্য কোর্স নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গঠিত কমিটি এ মাসেই রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। কমিটি প্রধান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। আশা করছি এ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারব, যা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, আজ ইউজিসি কোর্স বন্ধ করতে বললেও এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই। মঞ্জুরি কমিশন ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল। ওই কৌশলপত্রের সুযোগেই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক প্রতিবাদের মধ্যেও ঢাবিসহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সান্ধ্য কোর্স চালু করা হয়। সান্ধ্য কোর্সের নিয়মানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরাই এই কোর্স পরিচালনা করেন।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0082259178161621