বদলে যেতে শুরু করেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের অবহেলিত এই জনপদের শিশুদের শিক্ষাজীবন। বাড়ির কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে সেখানে পড়তে পেরে খুশি তারা। এছাড়াও ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করায় বাধা নেই এখন পড়ালেখায়। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষককে। সেইসঙ্গে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভাগ্যে জুটছে না উপবৃত্তি। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
ভারতের কাটাতার থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাড়ে ৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত দেশের বৃহত্তম বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় লোকসংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এই দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষক বিনাবেতনে পাঠদান করাচ্ছেন। স্বীকৃতির কাগজাদি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানো হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় কমিটির দাশিয়ারছড়া ইউনিটের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, বাংলাদেশি ভুখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে শিক্ষকতা করলেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা ভীষণ অর্থকষ্টে রয়েছেন। আগে পুরাতন বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেলেও এখন বিলুপ্ত ছিটের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপবৃত্তি না পাওয়ায় দরিদ্র অভিভাবকরা সন্তানদের কাছাকাছি স্কুলে ভর্তি করিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনি সকল স্কুলকে পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি এবং এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, স্বীকৃতির বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি তারা খুব শিগগিরই স্বীকৃতি পাবেন এবং উপবৃত্তিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলো পাবেন।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের মূল ভুখণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের জীবনযাত্রা। এখনে সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তা নির্মাণ, স্মার্টকার্ড বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনায় সম্পৃক্ত করা হয় অধিবাসীদের।
এছাড়াও বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় সরকারিভাবে গড়ে ওঠে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যে এসব বিদ্যালয়ের অবকাঠমো তৈরি শেষ পর্যায়ে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে চালু হবে এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি স্থানীয়দের উদ্যোগে মাধ্যমিক পর্যায়ে এখানে ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদরাসার কার্যক্রম শুরু করা হয়।