দুর্নীতির অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলে অনুষ্ঠিত অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত এ পত্রের অনুলিপি ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়েছে।
একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নিয়োগের অনিয়মের পুরো ঘটনা তদন্ত করে আগামী তিন দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ চিঠির সঙ্গে অভিভাবকদের ও গভর্নিং বডির কয়েক সদস্যের করা পৃথক দুটি অভিযোগও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ পাবার পর চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে অধিদপ্তর। কারণ এ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তার নাম এই নিয়োগ অনিয়মে জড়িয়ে গেছে। তিনি হলেন পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী। তিনি এ নিয়োগে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি ছিলেন।
অধিদপ্তর বলছে, খোদ পরিচালকের বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এর তদন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অন্য কাউকে দিয়ে করানোর সুযোগ নেই। তাই তারা চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাউকে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার অনুরোধ জানাবে।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্কুলের গভর্নিং বডি একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে। কমিটিতে গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, অধিদপ্তর পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরাও ছিলেন। ২৬ এপ্রিল সকালে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। মোট ১০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়, যিনি লিখিত পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পেয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার গতকাল ভিকারুননিসা ক্যাম্পাসে বলেন, 'লিখিত, মৌখিক ও একাডেমিক ফলের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত যোগ্যতম প্রার্থীকে অধ্যক্ষ পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান চলবে। এখানে কোনো অনিয়ম হতে দেব না।'
সুপারিশকৃত প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গভর্নিং বডির সদস্য তাজুল ইসলাম পাস মার্ক কম পাওয়ার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। কিন্তু এ শর্তের পক্ষে কোনো যুক্তি আছে কি-না, তা বলতে বললে তিনি জানাতে পারেননি।
একটি সিন্ডিকেট স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতেই অভিযোগ তুলেছে- দাবি করে গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারী অধ্যক্ষরা ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত থাকলে তাদের দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা আদায় করা যায়। এ জন্য একটি সিন্ডিকেট অধ্যক্ষ নিয়োগে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগকারী অভিভাবকরা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বেগম বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।
আরও পড়ুন: সাড়ে তিন পেয়ে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হচ্ছেন রুমানা শাহীন