কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় প্রায় ২৭ মাস আগে। বিশ্বকবির ভালোবাসার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও একটি ইটের গাঁথুনি পড়েনি। কেবল উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়েছে। গেল শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তির কথা থাকলেও তা হয়নি।
এবারও শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ শনিবার রাতে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। আমরা এ বছর সীমিত আকারে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করার চিন্তাভাবনা করছি। ভবন না থাকলেও সমস্যা নেই। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাড়াবাড়িতে কার্যক্রম শুরু হয়। আমরাও তাই করব। একটি কলেজের কিছু কক্ষে ক্লাস নেয়া হবে।’
জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তির কথা বলা হলেও কোনো শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় হবে, সেই জায়গাও নির্ধারণ করা হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) তৈরি হয়নি। কেবল একটি আইন পাস হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আইন তৈরি হয়েছে। এ বছরের ১ জুন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে।
উপাচার্যই মূল ব্যক্তি। আশা করছি এখন কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যদিও কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই, তারপরও আমরা এর জন্য যা যা করা যায়, সব সহযোগিতা করব। এদিকে আমাদের বিশেষ নজর আছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা আছে। সে অনুসারে ২০১৫ সালের ৮ মে দেশের ৩৯তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি স্থাপনের ঘোষণা আসে। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে ইউজিসিকে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। শান্তিনিকেতনের আদলে এটি গড়ে তোলার কথা। প্রাথমিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদ হওয়ার কথা- সঙ্গীত ও নৃত্য, চারুকলা, নাট্যকলা, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি ও সমবায়, ব্যবসা প্রশাসন, আইন, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, শুরুতে সামান্য বিলম্ব হলেও এটি স্থাপন কাজ অন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সহজ। এর জমিজমা অনেকটাই নির্ধারিত আছে।
উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় ১২শ’ একর জমি রয়েছে, যা বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এর মধ্যে শুধু বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার একটি দাগেই রয়েছে কবির সাড়ে ৪শ’ বিঘা জমি। সুতরাং স্থান সমস্যা নয়। যেহেতু উপাচার্য নিয়োগ হয়ে গেছে, এখন সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দ্রুতই এগোবে।