ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সরস্বতী পূজার দিনেই ভোটের তারিখ পরায় বিষয়টি সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে আঘাত হেনেছে বলে মনে করে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট। একই দিনে দেশব্যাপী সরস্বতী পূজা। এমন পরিস্থিতিতে এই তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে সরব হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সিটি নির্বাচন পেছানোর দাবিতে গত কয়েক দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক বিক্ষোভ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত দুদিন রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধও করেছেন তারা। এর নেতৃত্বে আছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার এই দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও দুজন শিক্ষক।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষক সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনী বিধি অনুসারে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের এখতিয়ার ইসির। ইসি ঘোষিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উদযাপিত হবে। এ উৎসব সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয়ে থাকে।
পূজার দিনে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে আঘাত হেনেছে এবং সর্বস্তরের মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভোট গ্রহণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে নির্বাচনী কার্যক্রম ও পূজা প্রতিপালন—কোনোটিই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করেছেন। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আশা প্রকাশ করে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইসি নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এদিকে আদালত বলেছেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনী কার্যক্রম এখন যে অবস্থায় আছে, ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই নির্বাচন পেছাতে যে রিট করা হয়েছে, তা সরাসরি খারিজ করা হলো।
সরস্বতীপূজার কারণে নির্বাচন পেছানোর জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার রিটটি খারিজ করে দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ।
৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রিট খারিজের কারণে এই তারিখ পরিবর্তনের আর কোনো সম্ভাবনা থাকছে না; যদিও নির্বাচন কমিশন চাইলে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ বা ভোটের তফসিলে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে।
আদালতে অশোক কুমার বলেন, ভোটের কেন্দ্র স্কুল-কলেজে হয়। আর সরস্বতী পূজাও হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। এ কারণে একই দিনে ভোট ও পূজা হলে সাধারণ মানুষের পূজা উদ্যাপন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা সংবিধানেরও বিরোধী। তিনি আদালতে জানান, সরস্বতী পূজার তিথি ২৯ জানুয়ারি ৯টা ১০ মিনিট থেকে ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টা পর্যন্ত।