মহাপরিচালকের শেষ কর্মদিবসে বদলির হিড়িক, লেনদেনের অভিযোগ - Dainikshiksha

মহাপরিচালকের শেষ কর্মদিবসে বদলির হিড়িক, লেনদেনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কোনো দপ্তর প্রধান তার শেষ কর্মদিবসে বদলীর আদেশ জারি করেন না। এমন রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ যাবত। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সদ্যবিদায়ী মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান তাঁর শেষ কার্যদিবসে রেওয়াজ ভেঙ্গেছেন। তিনি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ১০ শতাংশ কোটায় কোনো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সরাসরি বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান। গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ছিল তাঁর শেষ কার্যদিবস। এদিন তিনি রেকর্ড সংখ্যক বদলীর আদেশ করেছেন। একদিনেই বদলী করা হয়েছে ৭৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে। এছাড়াও শেষ দিনে কেনাকাটারও বেশ কিছু ফাইল অনুমোদন করেছেন তিনি। এসব বদলী ও কেনাকাটার সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন জড়িত বলে দৈনিকশিক্ষার কাছে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
মহাপরিচালকের শেষ কার্যদিবসে ২৯ জন কর্মচারিকে বদলী করা হয়। একই দিন সরকারি কলেজে ২৫ জন বিসিএস ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকের বদলীর আদেশ জারি করা হয়। এই বদলিতে অভিযোগের তীর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান ও উপ-পরিচালক ড. মোস্তফা কামালের দিকে।

গত বৃহস্পতিবার ১৫ জন সহকারি শিক্ষক ও আট জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর ১৯ জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ২৬ ডিসেম্বর ১৯ জন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা, ২২ ডিসেম্বর ৬৪ জন কর্মচারি, ২১ ডিসেম্বর ১৯ জন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা, ১৪ ডিসেম্বর ১৭ জন কর্মচারি, ৭ ডিসেম্বর চারজন কর্মকর্তাসহ আরো বেশকিছু বদলী করা হয়। অর্থাৎ মহাপরিচালকের শেষ কর্মমাসেও প্রায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি বদলী করা হয়। যা অন্যান্য মাসের তুলনায় রেকর্ড বলে জানিয়েছেন মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

মাধ্যমিক স্কুলের বদলিতে ওয়াহিদুজ্জামানের দপ্তরের দু্জন, একজন উপ-পরিচালক, কলেজ শাখার পরিচালকের ড্রাইভার আলাউদ্দিন, প্রধান সহকারি মাহবুব ও ড্রাইভার আলাউদ্দিনের ভাই মো: ইউসুফ জড়িত বলে জানা যায়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদলিতে কর্মকর্তাদের সমিতির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে টাকা কালেকশনের অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি চক্রের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আনছার নামের একজন জড়িত। এই আনছার জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একাধিক কর্মকর্তার মতে, ইতিপূর্বেকার কোনো মহাপরিচালকের শেষ কার্যদিবসে বদলীর রেকর্ড নেই। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবগণও তাদের শেষ কর্মদিবসে বদলী বা পদোন্নতির কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি।
অভিযোগে জানা যায়, যেদিন বদলীর ফাইলে স্বাক্ষর হয় সেদিনই আদেশগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের কোনো বদলির আদেশ ওইদিন ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়নি। আজ রোববার তা ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এতে অনৈতিক লেনদেনের সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বদলীতে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। তবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের অর্থাৎ সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বদলী করেন কলেজ শাখা। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলী করেন মাধ্যমিক শাখা। আর মাউশি অধিদপ্তরে প্রশাসন শাখা বদলী করেন উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং সকল পর্যায়ের কর্মচারিদের। এই বদলীতেই মূলত ব্যাপক লেনদেন হয়।
সূত্র জানায়, উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের এমপিওতে ব্যাপক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব পদে বদলীর রেটও অনেক। এই দুই পদে বদলীতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা লেনদেন হয়। এরপর কর্মচারি বদলীতেও এক থেকে দেড় লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আর যদি কর্মচারিরা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে বদলী হতে চান সেক্ষেত্রে পাঁচ-সাত লাখ টাকাও অনৈতিক লেনদেন হয়।
অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘আমরা বিদায়ী মহাপরিচালককে বলেছিলাম, তাঁর শেষ দিনে যেন তিনি বদলীর আদেশে স্বাক্ষর না করেন। এতে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু এরপরও এতো বদলী কিভাবে হলো তা বলতে পারবো না। তবে এটা একেবারেই শেষ সময়ে হয়েছে।’
অভিযোগ রয়েছে, মাউশির কতিপয় কর্মকর্তা গত শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও অফিস করেছেন। অনেক কর্মচারির বদলীর ফাইল ব্যাকডেটে সই করানো হয়েছে। তাই ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবারের আদেশ দেওয়া হয়নি। যা সম্পূর্ণই নিয়ম-নীতি ব্যতয় বলে জানা গেছে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039300918579102