শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে দৈনিক ইত্তেফাকের একটি শিরোনাম প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বেসরকারি কলেজে গভর্নিং বডির অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনায় শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা গভর্নিং বডির সভাপতি পদে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটির মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, দুটি ঘটনার উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এক কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে যেমন মামলা হয়েছে, তেমনি তার সুযোগ্য পুত্র স্কুলছাত্রী ধর্ষণের দায়ে কারাগারে আটক রয়েছে। অন্য এক কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন মার্কেট দখলসহ দুর্নীতি এবং অন্যান্য অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। বলা হয়েছে অল্পসংখ্যক কয়েকটি কলেজ ব্যতীত দেশের বেশিরভাগ কলেজের গভর্নিং বডির চিত্রই এমন।
আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এবং কেউই নির্বাচিত নন, মনোনিত। শাসক দলের দলীয় নেতাদের মধ্য থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের মনোনিত করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রয়েছেন থানা ওয়ার্ড শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতা। দুর্নীতির টাকা, কালোটাকা, সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক কানেকশনের জোরে এরাই এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এরা স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে অনৈতিকভাবে যুক্ত হন। শিক্ষকদের ওপর কর্তৃত্ব করেন। এদের হস্তক্ষেপের কারণে নির্বিঘ্নে এবং নিয়মমাফিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্ননের যারা ভূমিকা রাখেন, মানসম্পন্নভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা বিতরণ করা সম্ভব, সেই সব শিক্ষানুরাগীদের এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডিতে নিয়োগ দেয়া হয় না। নির্বাচন তো হয়ই না।
বস্তুত দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে অনৈতিক ব্যক্তি বা মাফিয়াদের বসানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্বস্তিতেও নেই শিক্ষকরা।
গভর্নিং বডির এ মান নিয়ে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই যে কাক্সিক্ষত মানের শিক্ষা দিতে পারছে, সেটা ক্রমই পরিষ্কার হচ্ছে দেশবাসীর কাছে। দিন দিন অবনতি ঘটছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। অর্থ, বিশেষ করে কালোটাকা, দুর্নীতি এবং পেশীশক্তিই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থা আরও বেশিদিন চলতে থাকলে এক সময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এ স্তরটি মুখ থুবড়ে পড়বে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য গভর্নিং বডিগুলোকে মানসম্মত করতে হলে সেখানে সত্যিকারের শিক্ষানুরাগীদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে গভর্নিং বডি নির্বাচিত করবার আদালতের যে নির্দেশ রয়েছে সেটা অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতে হবে। দলীয় এবং প্রভাবশালী মনোনিতদের যাদের সঙ্গে শিক্ষার কোন যোগাযোগ নেই, অর্থ, পেশীশক্তি এবং রাজনৈতিক কানেকশন যাদের হাতিয়ার তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি থেকে দূরে রাখতে হবে। রাজনৈতিক কারণে বা রাজনৈতিক প্রভাবে গভর্নিং বডিতে নিয়োগের ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।
অযাচিত হস্তক্ষেপ ছাড়া নিয়ম ও বিধি অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতে দিতে হবে। এখনই বেসরকারি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিগুলোকে রাহুমুক্ত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে রাহুগ্রস্ত হবে সে বিষয়ে কান সন্দেহ নেই।