রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিফলকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিচের দিকে রেখে অসম্মানিত করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠার পর থেকে থমকে আছে নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
তাছাড়া কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে নির্র্মাণ কাজ সে নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তার। অনেকে দাবি করছেন, ছাত্রলীগ ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের মুখে সিদ্ধান্তহীনতায় কাজ এগোতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে নির্মাণ কর্তৃপক্ষ দাবী করছেন, নতুন করে বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে স্মৃতিফলকের নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে নির্মাণ কমিটির আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর সুলতান উল ইসলাম বলেন, একসাথে বাজেট করে স্মৃতিফলকটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। কাঠামো নির্মাণ ও শৈল্পিক এই দুই টি পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কাজ হচ্ছে। এভাবে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল।
কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, যে পরিমাণ অর্থ স্মৃতিফলকটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সে অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে। নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য এখনও অনেক টাকা ব্যয়ের প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে সিন্ডিকেটের অনুমোদন পেলে অতিদ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দ না পেলে কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে বিতর্কিত অবস্থায় পড়ে থাকা এ স্মৃতিফলকটি ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে বছরের এপ্রিলের ১৫ তারিখে প্রথম বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে আবারও মে মাসের ১৪ তারিখে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে সাথে নিয়ে আবারও বিক্ষোভ করেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু সকলের উর্ধ্বে। ক্যাম্পাসে এই স্মৃতিফলকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিচের দিকে স্থাপন করে তাকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নতুন করে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানান তারা।
তবে নতুন করে তৈরি হবে কি হবে না সে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা নির্মাণ কমিটির কোন সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত প্রশাসনের আমলে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। নতুন ভিসি আসার পর আমরা বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি নিয়ে কথা বলেছি। ভিসি আমাদের আস্বস্ত করেছেন যে বঙ্গবন্ধুকে তার সম্মানের স্থানে রেখেই স্মৃতিফলকের নির্মাণ কাজ সম্পন করা হবে।
স্মৃতিফলকের নির্মাণ কাজ থেমে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা বলেন, দৃশ্যত থেমে আছে দেখালেও প্রকৃত অর্থে নির্মাণ কাজ থেমে নেই। ভিসি মহোদয়ের সাথে আলোচনা হয়েছে তিনি বিষয়টি দেখছেন। তাছাড়া অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন করে নির্মাণ হবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, যদি প্রয়োজন হয় তবে সে বিষয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ নিবে।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গত বছরের ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। স্মৃতিফলকটির নির্মাণ ব্যায় ধরা হয় ৬১ লাখ টাকা।
তাছাড়া স্মৃতিফলক নির্মাণ কাজ গত বছরের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের (১৪ ডিসেম্বর) আগেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।