অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগে বিতর্কিত পরিচালনা কমিটির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জড়িত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। সব অনিয়ম দূর ও শাহেদুলের শাস্তি দাবিতে তারা প্রধানমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। বেসরকারি নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে অধিদপ্তরের দ্বির্তীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম অভিযোগ। এমন অভিযোগ আগে কারো বিরুদ্ধে হয়েছে বলে শিক্ষক-অভিভাবক ও সাংবাদিকদের জানা নেই।
অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ.কে.এম খোরশেদ আলম বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য আর্থিকভাবে লাভবান হতে না পেরে গত ৮ বছরেও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেননি। তবে, মেয়াদের শেষ দিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বর্তমান কমিটি। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার দাবি ছিল অভিভাবকদের। কিন্তু নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের পাঁয়তারা করে। বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পেরে গত ২৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু মহাপরিচালক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ২৬ এপ্রিল পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান। নিয়োগ কমিটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উত্তরপত্রে ৩০ নম্বরের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য এবং ৩টি বাংলা ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেন।
আরও পড়ুন: সাড়ে তিন পেয়ে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হচ্ছেন রুমানা শাহীন
তিনি বলেন, পরীক্ষায় ইংরেজি প্রশ্নের জন্য ১৮ এবং বাংলা প্রশ্নের জন্য ১২ নম্বর নির্দিষ্ট ছিল। প্রার্থীরা প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে আশ্চর্য হন। কোনো প্রশাসনিক পদের জন্য ইংরেজি ভাষায় অধিক প্রশ্ন দেয়ার নজির নেই। এটা আইন ও উচ্চতর আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশের পরিপন্থি। এছাড়াও কমিটির কতিপয় সদস্য ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিকভাবে কয়েকশ শিক্ষার্থী ভর্তি করেন।
আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গভর্নিং বডির সদস্যরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গত ২৭ এপ্রিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার সব প্রক্রিয়া শেষ করেন। ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অনিয়ম ও অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের আবেদন করলে তা স্থগিত হয়।
বিভিন্ন সময় গভর্নিং বডির সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভর্তি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক আবেদন করা হয়। এসব আবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি। বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী ৪ মে শেষ হবে। তাদের দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দ্রুত কমিটি ভেঙ্গে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন অভিভাবকরা। অভিযোগ দেয়ার পর কমিটির কতিপয় সদস্য তাদের বিভিন্নভাবে খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন অভিভাবকরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আ. রহিম রানা, মো. মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আ. মজিদ সুজন, আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রবিউল হাসান ইমন প্রমুখ।