শিক্ষকদের কোচিং-টিউশন বন্ধ হলেও চলবে বাণিজ্যিক কোচিং - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা আইনের খসড়াশিক্ষকদের কোচিং-টিউশন বন্ধ হলেও চলবে বাণিজ্যিক কোচিং

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকরা কোচিং-টিউশনি করাতে না পারলেও বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার চলবে। সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্থাপন করা যাবে না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেতন ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করবে সরকার বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান। এসব বিধানসহ ৫৮টি ধারা সংবলিত শিক্ষা আইন-২০২০ এর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেষ সময়ের ঘষামাজা চলছে। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। খসড়ার কপি দৈনিক শিক্ষার হাতে রয়েছে। 

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নোট-গাইডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর লেখা থাকে যে পুস্তকে, যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়।

অপরদিকে কোচিং সংক্রান্ত বিধানে উল্লেখ আছে, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট-টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন পদ্ধতিতেও প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। করলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের লিখিত সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল সময়ের পরে বা আগে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি বা নীতিমালা অথবা জারিকৃত পরিপত্র বা নির্বাহী আদেশ অনুসরণপূর্বক অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

এতে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারকে বৈধতা দিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদানের উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা এ আইনের অধীন নিষিদ্ধ হইবে না। এক্ষেত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এক. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময় সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাইবে না। করা হলে উক্ত কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা যাবে। দুই. কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে পারবেন না। করলে তা অসদাচরণ হিসেবে শাস্তিযোগ্য হবে।

এতে কোচিংয়ের সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে বলা হয়, সরকারি বা স্বীকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষক কর্তৃক এক বা একাধিক শিক্ষার্থীকে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা নির্দিষ্ট স্থানে অর্থের বিনিময়ে পাঠদান কার্যক্রম। আর প্রাইভেট টিউশন সম্পর্কে বলা হয়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে মূল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে যে কোনো স্থানে শিক্ষা প্রদান।

প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান চার স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে- পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। এরপরে শুরু উচ্চশিক্ষা স্তর। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথাও আছে আইনে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে সংসদে অনুমোদন করা শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক বাদে তিন স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা আছে। তবে আইনের অন্য ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী এটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন সরকার সময়ে সময়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ ও পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। আর নির্ধারণ ও পুনঃনির্ধারণ হলে তা সার্বিকভাবে অনুসরণীয় হবে। সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে এতে বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থাকতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, অন্য আইনে যা উল্লেখ আছে তাতে শিক্ষা আইনে বর্ণিত বিধান সংযোজিত বা প্রতিস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত উক্ত আইন, বিধি বা প্রবিধি এ আইনের অধীন বা দ্বারা সংশোধিত বলে গণ্য হবে। একই কথা উল্লেখ আছে চতুর্থ অধ্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের ক্ষেত্রে। মাধ্যমিক শিক্ষার ধারা হবে তিনটি- সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। প্রাথমিক স্তরের ক্ষেত্রে কোনো ধারা উল্লেখ নেই। এতে বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণিতে চলমান পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশি কারিকুলামে বিদেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও অনুমতি লাগবে। ট্রাস্ট বা সংস্থা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবে অনুমতি সাপেক্ষে। কিন্তু এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ অন্যত্র সরানো যাবে না। কোনো এলাকায় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন না থাকলে সরকার তা পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত, স্থানান্তর বা বিলুপ্ত করতে পারবে।

আইনে ইংরেজি মাধ্যমের বা বিদেশি পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। এর ব্যত্যয় করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

বিদেশি পাঠক্রমে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা অথবা বিদেশি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। বিদেশি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্যান্য ফি আইন, বিধি বা আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে।

খসড়ায় উচ্চ শিক্ষার স্তরের প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চিহ্নিত হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাটি স্পষ্ট উল্লেখ নেই। এ অংশে বলা হয়েছে, সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতিতে হবে। নির্ধারিত বিষয়ের আলোকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে।

আইনে শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ৬০ শতাংশের কম ক্লাসে উপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কারণ প্রদর্শন ছাড়া পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। ৪০ শতাংশের কম ক্লাসে উপস্থিত থাকলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির ওপর বিধিনিষেধ এবং শিক্ষক সুরক্ষার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষায় নকলে সহায়তা করা এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও এতে সংশিষ্টতা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা দণ্ড অথবা উভয়দণ্ড দেয়া যাবে। কোনো শিক্ষক নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ালে তার শিক্ষক নিবন্ধন বাতিল করা যাবে।

এতে নয়টি কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও আংশিক বা সম্পূর্ণ সাময়িকভাবে বন্ধ ও কর্তন এবং বাতিলের কথা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি এর চেয়ারম্যান কার্যপরিধির বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এবং এ কারণে কোনো অনিয়ম বা পাঠদান বাধাগ্রস্ত হলে কমিটি সার্বিকভাবে বা ক্ষেত্রমতে চেয়ারম্যান দায়ী হবেন। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত কমিটি বাতিল বা ক্ষেত্রমত চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারবে।

 

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070259571075439