বার্ষিক পরীক্ষায় সন্তান নকল করেছে এই অভিযোগে অভিভাবককে তলব করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপাল ও পরে প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চায় ছাত্রী ও তার বামা-মা। একপর্যায়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চায় ছাত্রী। ক্ষমা না করে টিসি নিতে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাবা-মা’কে এমন অপমানজনক পরিস্থিতিতে ফেলার ধকল সইতে পারলো না রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি। বাসায় ফিরে নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করে সে।
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। শান্তিনগরে অরিত্রি’র বাসা থেকে ফ্যানের সাথে ওড়নায় ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। অরিত্রি অধিকারীর বয়স ছিলো মাত্র ১৫ বছর। অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী একজন সি এন্ড এফ ব্যবসায়ী।
অরিত্রির মা-বাবা দৈনিক শিক্ষার কাছে অভিযোগ করেন, অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার (২ ডিসেম্বর) স্কুলে পরীক্ষার সময় তার মেয়ে মোবাইল নিয়ে গিয়েছিল। মোবাইলে নকল আছে এমন অভিযোগে ওই স্কুলের শিক্ষক সোমবার (৩ ডিসেম্বর) তাদের স্কুলে যেতে বলেন। সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে মেয়ের বিরুদ্ধে নকল করার অভিযোগ শুনে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান।
কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি। পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তিনি তাদের সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।
অরিত্রির মা-বাবা আরো অভিযোগ করেন, প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করায় তার মেয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়। পরে তারা গিয়ে দেখেন অরিত্রি নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আছে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বলেন, সুরতহাল করে অরিত্রির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যু কারণ জানা যাবে।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
এদিকে অরিত্রির মৃত্যুর সংবাদ শুনে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ভিকারুননিসার প্রিন্সিপাল নাসরিন ফেরদৌস। সেখানে তিনি অরিত্রির স্বজনদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় তাঁরা প্রিন্সিপালের গাড়ি ঘিরে রাখেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
এ ব্যাপারে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল নাজনিন ফেরদৌসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে ফোন করতে বলেন।