প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ের তলানিতে। প্রতিনিয়ত এখানে শিক্ষার মান নিম্নগামী হচ্ছে বলেই মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বর্তমান ও সাবেক অনেক শিক্ষক এখানকার শিক্ষার মান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁরা মনে করেন, অনিয়মের কারণেই ডুবছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তা বন্ধ করার কিংবা ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম পুনরুদ্ধারের কোনো প্রচেষ্টা নেই বললেই চলে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দুই বছরে এখানে এমন অর্ধশত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখেন না। রাজনৈতিক ও অন্যান্য পক্ষপাতিত্বের কারণেই তাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু গত দুই বছরই নয়, এই ধারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। এমন শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কী শেখাবেন, আর কী গবেষণা পরিচালনা করবেন? ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্রমেই নিচে নামছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একজন শিক্ষকের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ সেই আদেশ বহাল রেখেছেন। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ঘটনা আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। শুধু যে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয় তা-ই নয়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিভাগের প্রয়োজন না থাকলেও সেখানে এক বা একাধিক শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। তিনজন শিক্ষকের প্রয়োজন থাকলে সেখানে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে অনেক বিভাগীয় প্রধান বিভিন্ন সময়ে আপত্তিও জানিয়েছেন। কিন্তু নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ বেপরোয়া। দল ভারী করার প্রয়োজনে তারা নিয়োগ দিয়েই চলেছে। অনেক সময় নামে মাত্র নতুন নতুন বিভাগ খুলেও সেখানে পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এতে শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ও পরিবেশ দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যায়, এভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা পাঠদান বা পরীক্ষা নেওয়ার বদলে তোষামোদী ও দলবাজিতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। তাঁদের কারো কারো বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ক্যাডারসুলভ আচরণের অভিযোগও উঠেছে। এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করতে হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন বসু, মোকারম হোসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরীদের মতো অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক কাজ করেছেন। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখানকার গ্র্যাজুয়েটদের বিশেষ কদর ছিল। আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির এমন দৈন্যদশা কেন—তা বর্তমান প্রশাসনকে ভেবে দেখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে। তার বদলে যদি এভাবে দলবাজি ও অনিয়ম চলতে থাকে, তার দায়দায়িত্ব বর্তমান প্রশাসনকেই নিতে হবে। জাতির ঘৃণা কুড়াতে হবে। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা থাকুক এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা হোক।
সৌজন্য: কালের কণ্ঠ