শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে হরেকরকম ভুল করেছেন আমলারা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের মূল দায়িত্বে। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন ব্যানবেইসের কর্মকর্তারা। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় পেয়েছেন এক বছর। আর সহায়তা নিয়েছেন ডেডিকেটেড সফটওয়্যারের। তবুও রয়েছে কয়েকডজন ভুল। আবার তালিকা ঘোষণার পর যাচাই-বাছাই করায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন শিক্ষকরা। তাদের প্রশ্ন এক বছরের বেশি সময় ধরে আবেদন নিয়ে তাহলে কী করলেন কর্মকর্তারা? তালিকাভুক্ত হয়েও তারা জানেন না কবে বেতন-ভাতা পাওয়া শুরু করবেন? যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, প্রায় অস্তিত্বহীন, মাছবাজারের মধ্যের ও ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগ ছাড়াও তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে নানা তথ্যবিকৃতি ও ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি।
আরও পড়ুন: না চাইলেও এমপিওভুক্ত তপোবন স্কুল
বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনিকে চিঠি লিখেছেন। এতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন কীভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে, যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের নামের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জনপ্রতিনিধিদের মতামত না নিয়ে এমপিও দেয়ায় যোগ্য ও এলাকার প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে বলে মনে করেন সংসদ সদস্যরাও। যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে তাই এখন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে।
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে এমনসব তথ্য। এমপিওভুক্তিতে হরেকরকম ভুলের তথ্য-উপাত্ত ধারাবহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় পর্বে থাকছে শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা এমপিদের চিঠিতে সচিত্র এমপিও কেলেঙ্কারি।
দিনাজপুর-১ এর এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল তার চিঠিতে লিখেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটা বেদনার। এই সাংসদের নিজ হাতে গড়ে তোলা দু-একটি প্রতিষ্ঠানসহ আরও ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে পুন:র্বিবেচনায় দাবি জানান তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এমপি আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন। এতে তিনি ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করে তার নির্বাচনী এলাকা রাজশাহী-৬ এর বাঘা উপজেলার ‘আলহাজ এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ’ এমপিওভুক্তি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন করেছেন। চিঠিতে কলেজটির ডিগ্রী স্তরের এমপিওভুক্তি পুনর্বিবেচনা করার সুপারিশ করেন তিনি।
দিনাজপুর ৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক তাঁর চিঠিতে তুলে ধরেছেন কীভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিও পাওয়া এবং বাদপড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন তার চিঠিতে। দেখুন চিঠির অংশ
গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ মো: ইউনুস আলী সরকার তার চিঠিতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী নারী শিক্ষায় অনগ্রসর নিভৃত পল্লী অঞ্চলে অবস্থিত ‘পাবনাপুর মহিলা কলেজ’ বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়ার জোর সুপারিশ করেন।
তিনি লিখেছেন, পলাশবাড়ী উপজেলায় ২টি মহিলা কলেজের মধ্যে একটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু উপজেলা সদর হতে ১৭ কিলোমিটার দূরে ‘পাবনাপুর মহিলা কলেজ’টি ৮টি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলের নারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সব ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কলেজটির ফলাফলও সন্তোষজনক। এ কলেজটি এমপিওভুক্ত করতে পুন:র্বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
কক্সবাজার-৩ এর সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে তাঁর নির্বাচনী এলাকার ‘আল-গিফারী (রাঃ) আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির পুন:র্বিবেচনা করার জন্য। তিনি লিখেছেন, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দীর্ঘ ২৯ বছরেও এমপিও পায়নি। তাই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতন জীবন-যাপন করছেন। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে ৫৯৮জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষার পাসের হার সন্তোষজনক। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির পুন:র্বিবেচনার জোর দাবি জানান তিনি।
সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ও পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং দৈনিক ইত্তেফাকের মালিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ডিও দিয়েছেন ইন্দুরকানী উপজেলার ‘পাড়েরহাট আর. এল (রাজলক্ষ্মী) মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ’ এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এমপিও পুন:র্বিবেচনা করার জন্য।
পিরোজপর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীও তার নির্বাচনী এলাকার ‘মহিউদ্দীন আহমেদ মহিলা কলেজ’ এমপিওভুক্তির পুন:র্বিবেচনার দাবী জানিয়েছেন। তিনি তার ডিও তে লিখেছেন, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রি স্তরে ১৫৩জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৩৪ জন পাস করেছেন।
পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দেও ১৪৫জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১২৭ জন পাস করেছেন। এ বছর পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। কলেজটির ডিগ্রী স্তরের এমপিও পুন:র্বিবেচনার জোর দাবী জানান তিনি।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য মো: জোয়াহেরুল ইসলাম ডিও দিয়েছেন তার নির্বাচনী এলাকার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পুন:র্বিবেচনার করার জন্য।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ‘গাজী নাছির উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ’টিকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্তি দিতে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ মো: আবু জাফর রাজু। এক পত্রে কলেজটিকে তিনি বিশেষ বিবেচনায় হলেও এমপিও দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেছেন।