শিক্ষা আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন দাবিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বইয়ের দোকানে ধর্মঘট (ভিডিও) - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন দাবিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বইয়ের দোকানে ধর্মঘট (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন খসড়ার কয়েকটি ধারা ও উপধারা সংশোধন ও সংযোজনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। দাবি আদায়ে তারা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের বইয়ের দোকানে ধর্মঘট পালন ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন।

পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেছেন। 

সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ২২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে নোট-গাইড ও অনুশীলন বই সম্পর্কে কি আছে আর তারা কি চান তা তুলে ধরেছেন।

শিক্ষা আইনের চারটি ধারা বাতিল দাবিতে বই প্রকাশকদের সংবাদ সম্মেলন | ছবি : রুম্মান তূর্য

আরিফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা আইনের খসড়ায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব ধারা-উপধারা সংশোজন করা হচ্ছে তা চূড়ান্ত হয়ে গেলে শিক্ষাব্যবস্থার অবনতি ঘটবে। লেখক, প্রকাশক ও শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্তচিন্তা চর্চায় বাধাগ্রস্ত হবেন। কামরুল হাসান শায়কসহ সমিতির সব পর্যায়ের নেতারা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

খসড়া আইনটির চারটি ধারায় আপত্তি সম্পর্কে তারা বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, কোনও প্রকার নোট বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও প্রকাশ করা যাবে না। যদি কোনো প্রকাশক এই আইন অমান্য করে নোট বা গাইড প্রকাশ করেন তাহলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আইনটি যদি চূড়ান্ত হয় তাহলে বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত আমরা প্রায় ২৪ লাখ মানুষ পথে বসে যাবো। এতে শিক্ষাব্যবস্থারও অবনতি ঘটবে। 

তারা দাবি করেন, আমরা ছোট বেলাতে কি শুধু একটা বই পড়েছি? যে লেখকের বই পছন্দ হয়েছে সেই বই পড়েছি। নানা রকমের বই পড়ে নানা রকম জ্ঞান নিয়েছি। এখনও শিক্ষার্থীরা যে বই পছন্দ করে সে বই কিনে পড়ে। এতে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এনসিটিবি যদি মাত্র একটি বই নির্ধারণ করে দেয় এবং সেটাই পড়তে হয় তাহলে তো মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটবে না। শিক্ষার্থীরা একটি সীমাবদ্ধ জ্ঞানের মধ্যে আটকে যাবে। কাজেই বই প্রকাশের স্বাধীনতা তো থাকতে হবে।

সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, অনুশীলনমূলক গ্রন্থ প্রকাশ ও বিক্রির সঙ্গে অন্তত ৮টি পেশার ২৪ লাখ মানুষ জড়িত। এই খাতে সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। এসব গ্রন্থ প্রকাশনা বন্ধ করা হলে সরকার একদিকে শত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হবে, আরেকদিকে কর্মহীন মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

পুস্তক প্রকাশকরা নোট-গাইড বই ও সৃজনশীল অনুশীলনমূলক বইয়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলোকেও তুলে ধরেন। তারা বলেন, নোট-গাইড বইয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর আলোকে শুধু পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য সহায়ক বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত হয়ে থাকে; অপরদিকে সৃজনশীল অনুশীলনমূলক বইয়ে পর্যাপ্ত অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন ধাপে যেমন- পাঠ্য প্রশ্ন ও নমুনা-উত্তর, প্রশ্ন ও উত্তরের ব্যাখ্যা, উত্তর-সংকেতসহ প্রশ্ন এবং প্রস্তুতি যাচাইয়ের জন্য উত্তরবিহীন নমুনা প্রশ্ন। এছাড়া সমন্বিত অধ্যায়ের প্রশ্ন, রিভিশন, প্রায়োগিক অভীক্ষার দিক্‌-নির্দেশনা, ইত্যাদি ধাপ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিখনদক্ষতা অর্জন করে পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রস্ভৃত হয়ে ওঠে। নোট-গাইড বইগুলো পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী ও বোর্ড-প্রশ্নের হুবহু সমাধান হিসেবে তৈরি করা হয়; অপরদিকে সৃজনশীল অনুশীলনমূলক বইয়ে পাঠ্যবইয়ে দেয়া সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর নমুনা উত্তর এবং প্রশ্ন ও উত্তরের ব্যাখ্যা দেয়া থাকে, যাতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল উত্তর লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

এদিকে, পরীক্ষায় যাতে শিক্ষার্থী হুবহু কমন পায় সে উদ্দেশ্যে সীমিতসংখ্যক প্রশ্নের নোট-গাইড বই তৈরি করা হয়। কিন্তু অনুশীলনমূলক বইয়ের উদ্দেশ্য হলো পর্যাপ্তসংখ্যক নমুনা প্রশ্ন চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকশিত করা। এসব প্রশ্ন পরীক্ষায় কমন পাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হয় না। আবার নোট-গাইড বইয়ের ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক পড়ার উৎসাহ হারায়। ফলে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বাধাগ্রস্ত হয় এবং শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, অনুশীলনমূলক বইয়ে দেয়া নমুনা প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীর ভাবনার জগৎকে বিস্তুত করে এবং তারা পাঠ্যবিষয়ের জ্ঞান নতুন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে তা যাচাইয়ের সুযোগ পায়। নোট-গাইড বই থেকে সরাসরি কমন পড়ার বিশ্বাসে শিক্ষার্থীরা না বুঝে মুখস্থ করার প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। অনুশীলনমূলক বই শুধুই অনুশীলনের জন্য। এসব বইয়ে দেয়া নমুনা প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করে কোনো লাভ নেই।

প্রকাশকদের দাবি, অনুশীলনমূলক বইয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের ব্যাখ্যা, উত্তর-সংকেতসহ অভিনব প্রশ্ন, সমন্বিত অধ্যায়ের প্রশ্ন, পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, শিখনফলের আলোকে বাস্তব পরিস্থিতিযুক্ত উদ্দীপকসব প্রশ্ন ও নমুনা-উত্তর, স্তুতি যাচাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সৃজনশীল প্রশ্ন, পরীক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য মডেল প্রশ্নপত্র, ই-লার্নিংকে উৎসাহিত করার জন্য ইন্টারনেট লিংক ইত্যাদি দেয়া থাকে। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত জ্ঞান লাভে সহায়ক।

অনুশীলনমূলক বই প্রকাশের উদ্দেশ্য জানিয়ে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ-নির্ভরতা কমিয়ে মেধার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজেদের সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলার জন্য এ পদ্ধতি চালু করা ছিল নিশ্চিতভাবেই একটি কার্যকর পদক্ষেপ। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পরও সৃজনশীল পদ্ধতিতে পুরোপুরি সাফল্য আসেনি । সাফল্য না আসার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলো হলো- দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংকট, শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন না হতেই সৃজনশীল পদ্ধতি কার্যকর হওয়া, উপযুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধৰ পাঠ্যপুস্তকের অভাব, পাঠ্যপুস্তকে পর্যাপ্ত নমুনা প্রশ্নের অভাব, অনেক শিক্ষকের মানসম্মত সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে না পারা, প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লিখতে হয় সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ধারণা অস্পষ্ট থাকা, সৃজনশীল পদ্ধতির আলোকে শ্রেণিকক্ষে পরিপূর্ণ পাঠদান নিশ্চিত করতে না পারা।

ভোরের কাগজের শিক্ষা সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন : এসএসসি পরীক্ষায় নোট-গাইড বা অনুশীলনমূলক বই থেকে প্রশ্ন  করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকাশক নেতারা বলেন, এসএসসির প্রশ্ন রিপিট হয়েছে। যদিও সরকার বলেছিল বিগত ১০ বছরের কোন প্রশ্ন রিপিট হবে না। তাদের ভুলের দায় কোন প্রকাশনা সংস্থা নেবে না। 

সংবাদ সম্মেলনে চ্যানেল আইয়ের একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নোট-গাইড বা অনুশীলনমূলক বই প্রকাশকরা শিক্ষক সমিতির নেতাদের টাকা দিয়ে শিক্ষকদের চরিত্র নষ্ট করা হয়েছে। জবাবে প্রকাশক নেতারা বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। আর বইয়ে দামও কমানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির এসব দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বাংলাদেশ মুদ্রন শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ ওয়েব প্রিন্টার্স এসেসিয়েশন, বাংলাদেশ বিপণন সমিতি, বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই মালিক সমিতি, বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক সমিতি, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পেপার মিল ওনার্স সমিতি, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কালি প্রস্তুতকারক সমিতির নেতারা।  

বিদ্যমান আইনে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত নোট-গাইড নিষিদ্ধ। 

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065069198608398