প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার একজন সফল মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকে অদ্যাবধি স্থির আছেন। শত প্রতিকূলতায়ও দল বদলের চিন্তাও করেননি। পুরস্কার হিসেবে এলাকাবাসী তাঁকে সাতবার এমপি নির্বাচিত করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁকে মন্ত্রী বানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের। গত পাঁচ বছরে একবারও গণশিক্ষামন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী বা মন্ত্রীর পরিবারের কোনও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। কোনও চিন্তা করতে হয়নি গণশিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে। গণশিক্ষামন্ত্রী মেয়ের কিংবা মেয়ের স্বামী কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের অমঙ্গল কামনা করেননি। কারো হাতের পুতুল হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। বাবার পক্ষে ভোট চাইতে গেলে ফিজারের দুই মেয়েকেই মানুষ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন স্বেচ্ছায়। ফিজার কখনো কোনও দেশ থেকে কথিত পুরস্কার পাননি বা নেননি।
পক্ষান্তরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, জিপিএ ফাইভ বিক্রিসহ নানা সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বহুবার। গতকাল পহোলা জানুয়ারির বই উৎসবে গণশিক্ষামন্ত্রী তাঁর নিজ এলাকায়ই ছিলেন। তিনি প্রকারন্তরে মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নিয়েছেন গত ২৪ ডিসেম্বর। দেশের লাখ লাখ শিক্ষকের প্রিয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায়ও এর ইঙ্গিত পাই।
দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এর আগে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে একবার এবং ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা পাঁচবার নির্বাচিত হন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনসহ মোট সাতবার তিনি এমপিও নির্বাচিত হলেন।
আমার মনে হয়, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে রাতারাতি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়ে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় এমপিও হলেও অনেকেই অদ্যাবধি আওয়ামী লীগার হতে পারেননি। সাবেক ছাত্রলীগারদের পূণর্মিলনীতে তারা দাওয়াত পাননা। তারা কয়েকবার নৌকা মার্কায় এমপি হলেও শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের জন্য বামাতি-জামাতি-ছুড খ বড় খ খোঁজেন। তস্য জুনিয়রদের সাথে আন্দু মাতেন। কানে মুখে কথা বলেন রাষ্ট্রীয় প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে। হঠাৎ হডু তুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের পতাকায় কেক কাটার আয়োজন হয়। শহীদ মিনারে জুতা পায়ে ওঠা হয়। এসব করে গোটা বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রশাসন তছনছ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষা মাফিয়া ক্যামরিয়ানদের দৌরাত্ব্য বেড়ে যায়। ক্যাডার নন ক্যাডার নির্বিশেষে প্রকৃত ত্যাগী ছাত্রলীগার- আওয়ামী লীগাররা আরো আরো কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে হাতাশা বাড়ে। নতুন প্রজন্মের আওয়ামী লীগাররা ভাবেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে পেলাম নন-আওয়ামী লীগার আমলা শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেককে। পরে পেলাম যোগদান করা আওয়ামী লীগার। ফল হয়েছে এই যে ত্যগী ছাত্র লীগার আর আওয়ামী লীগারদের শিক্ষা প্রশাসন থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। শিক্ষায় মন্ত্রী থাকতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নির্দেশ দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকেই। যোগদানকরা আওয়ামী লীগারদের হাতে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় থাকলে জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।
আমি একজন সামান্য শিক্ষক হিসেবে আমার বিবেচনায় গণশিক্ষামন্ত্রীকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়া হোক।
এবার মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর প্রসঙ্গে আসি। পত্রিকায় দেখলাম তিনি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। আওয়ামী লীগের জন্য তাঁর পিতার রয়েছে আত্মত্যাগ। তার পদোন্নতি চাই।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এখন বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করি। গতকাল আমাদের কলেজের পাশের আড্ডাস্থলে শুনতে পেলাম চিটাগং, টাঙ্গাইল, বরিশাল ও যশোরের মাটির সূর্য সন্তান, যারা ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করছেন, কোনও দিন দলত্যাগ করেননি, তাদেরকে শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আমি আরও শুনতে পেলাম অতীতে যাদেরকে তিনতিনবার মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেয়ার কথা উঠলেও একজন কমিউনিস্ট-টার্নড-আওয়ামী লীগারের তদবিরে টিকে গেছেন তাদের কোনও তদবিরে এবার কাজ হবে না। যদিও তারা তদবির অব্যাহত রাখছেন, পদ ধরে রাখতে।
হাবিবুর রহমান খান
ননএমপিও কলেজ শিক্ষক
কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ