শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানির অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার দোহার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হিন্দোল বারীর বিরুদ্ধে শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের একটি অংশ তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সোচ্চার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে হিন্দোল বারী বিষয়টিকে তাঁর কারণে দুর্নীতি করতে না পারা  শিক্ষকদের একটি গ্রুপের অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন। হিন্দোলের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়েছে শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি যারা হিন্দোল বারীর বিপক্ষে অভিযোগ দাখিল করেছেন তাঁরাও একটা সময়ে তাঁর অনুগত গ্রুপের পক্ষে ছিলেন। সম্প্রতি হিন্দোল বারী তাঁর অনুসারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে নৌ ভ্রমণে যান। তবে কর্মদিবসে স্কুল ফেলে ভ্রমণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা একজনও স্কুল থেকে লিখিতভাবে ছুটি নিয়ে যাননি। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হিন্দোলের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। দোহারের হাতনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার নিতু বলেন, ‘হিন্দোল বারী আমাকে বিভিন্ন বাজে কথা বলতেন, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যদি সঠিক বিচার না পাই তাহলে আদালত পর্যন্ত যাব।’

হয়রানির শিকার শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, হিন্দোল বারীর কথামতো কাজ না করলে তাঁদের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাজে পোস্টিং, বেতন স্কেল নিয়ে কারসাজি ও বিভাগীয় মামলা দেওয়ার হুমকিসহ নানাভাবে তাঁদের হয়রানি করা হয় বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উত্তর মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে আমি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলাম। এখানে মাত্র দুজন শিক্ষিকা ছিলাম। অন্য শিক্ষিকার সঙ্গে হিন্দোল বারীর ভালো সম্পর্ক ছিল। স্কুল চলাকালীন বহুদিন হিন্দোল বারী নাসিমাকে ডেকে নিয়ে যেত। ফলে অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে হতো আমাকে। এই বিষয়ে হিন্দোল বারীকে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন আমাকে এবং প্রধান শিক্ষিকার পদ থেকে সরিয়ে দেন। তিনি আমাকে বিভাগীয় মামলার হুমকিও দিয়েছেন।’

চৈতাবাতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা মণ্ডল বলেন, ‘হিন্দোল বারী বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তাঁর ব্যবহার অনেক খারাপ। আমাকে অনেকবার বাজে কথা বলেছে, সেসব কথা বলা যাবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা হিন্দোল বারীর কারসাজিতে আইন ভঙ্গ করে চলতি বছরের ৩১ মার্চ দোহার উপজেলার মেঘুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নওরীন জাহানকে শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। একইভাবে শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোহর চন্দ্র দাসকে মেঘুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদ না থাকার পরও বদলি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অনেক অভিযোগই রয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরি করার কারণে সব কিছু বলতে পারি না। তা ছাড়া বলেও কোনো লাভ হয় না, একপর্যায়ে দেখি যারা ব্যবস্থা নেবে তারাই ওই শিক্ষা অফিসারের লোক। উল্টো আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’

ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলিয়া ফেরদৌসী শিখা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

অভিযোগগুলোর বিষয়ে দোহার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হিন্দোল বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোহারে প্রাথমিক  শিক্ষকদের দুটি গ্রুপ রয়েছে। আগে এই গ্রুপটা নানা ধরনের অনিয়ম করেছে। এরা এখন শিক্ষা অফিসে সেরকমভাবে পাত্তা পায় না। এরা আগে বৃত্তি বিক্রি করত, জিপিএ ৫ বিক্রি করত, বদলির জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন করত। এগুলো এখন করতে পারে না বলে আমার বিরুদ্ধে নোংরা অভিযোগ দিচ্ছে।’

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা বলেন, ‘আমার দপ্তরে লিখিত একটি অভিযোগ জমা হয়েছে হিন্দোল বারীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেনকে বৃহস্পতিবার সকালে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046241283416748