প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি ৩৬৩ কোটি’র কিছু বেশি টাকা পেয়ে আসছিল।
টেন্ডারসহ নানা অনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই টাকা এনসিটিবিকে দিত। কিন্তু এই প্রক্রিয়া আর রাখতে চাইছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তারা চাইছেন, প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানোর টাকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি তাদের হাতে দিবেন, তারা এনসিটিবিকে টাকা দেবে। কিন্তু এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বাধ সাধছে। দুই মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রগুলো দৈনিকশিক্ষাডটকমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, দুই মন্ত্রণালয় মিলে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাই বলেনি। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন ‘খবরদারিকে’ মানতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘দাদাগিরি’। সব সময়ই তারা বিভিন্ন অৎুহাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দাবিয়ে রাখতে চায়।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমি শুনেছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরকম একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এাঁর সত্যতা আগে নির্ণয় করি, তারপর ব্যবস্থা নেব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাজেট) মো. মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানোর টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল।
এর জবাবে কয়েকদিন আগে অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলেছে, ‘এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় একমত রয়েছে কী তা জানাতে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন জবাবের পর এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা করবে।
সভাশেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর এমন সভা কেন, আগে করা গেল না-এমন প্রশ্নের জবাবে ওই যুগ্ম-সচিব বলেন, সব উত্তর দেওয়া উচিত না। তবে তিনি বলেন, এনসিটিবির একটি প্রস্তাবনার আলোকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে এমন চিঠি দিয়েছে বলে তিনি জানান। এখানে কোনো ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ নেই।
এনসিটিবি কেন এমন প্রস্তাবনা দিল-এর উত্তরে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানোর অনেক পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় টাকা দেয়।
আর মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের টাকা দ্রুত দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেরি করে টাকা দেওয়ায় এনসিটিবির অনেক সমস্যা হয়। এই সমস্যা কাটাতে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাকা দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে বই উৎসব উদ্্যাপনকে কেন্দ্র করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘মন কষাকষি’ চলছে। তাদের মধ্যে ফাটল এতই বেশি যে, এবারের বই উৎসব আলাদাভাবে পালন করছে মন্ত্রণালয় দুটি।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যৌথবই উৎসবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গনশিক্ষা মন্ত্রীকে নিয়ে একটি বেফাঁস শব্দ প্রয়োগ করায় পুরো অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। মনকষাকষির শুরু সেখান থেকেই। এমনটাই মনে করছেন ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষাবিদ , শিক্ষক ও সাংবাদিকরা।