বাগেরহাটে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয় সরকারি শিশু সদনের মূল ভবনটি ২০১১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হলে গত ৫ বছর ধরে শিশু সদনটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নয়, মূল এ ভবনটি ভেঙে ফেলার কারণে বিদ্যালয়ের ভবনটিতে হয়েছে অসহায় এতিম শিশুদের ঠাঁই। আর সেখানেই পিতা-মাতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের রাখা হয়েছে গাদাগাদি করে। ভবন সংকটের কারণে সরকারি এ সদনটিতে ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। এমনকি ৫৭ বছরের পুরনো এ শিশু সদনটির প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম পরিচালনা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
৪৫০ নিবাসী নিয়ে ১৯৬০ সালে বৃহত্তর খুলনার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নে ৫.৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিভাগীয় সরকারি শিশু সদনটি। ১৯৭০ সালে ৪০০ শিশুর আবাসনসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা রেখে নির্মিত হয় শিশু সদনের মূল ভবনসহ কয়েকটি ভবন।
২০১১ সালে মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বাগেরহাট গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৩ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণ করা হয়েছে। মূল ভবন অপসারণের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি এ সদনের সংকট কবে কাটবে তা জানাতে পারেনি বাগেরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তর।
বাগেরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কানিজ মোস্তফা বলেন, ভবন সংকটের কারণে পাঠদানের পরিবেশ না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে সদনটিতে প্রাথমিক পর্যায়ের যে শিশু রয়েছে তাদের কাছাকাছি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের চেষ্টা করছি। নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ হবে সেটা জানি, তবে কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে সে বিষয়টি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।
সরেজমিন শিশু সদনটিতে গিয়ে জানা যায়, শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এতিম বালকদের লেখাপড়া পরিচালিত হয়ে আসছে এখানে। এখান থেকে লেখাপড়া শেষ করা এতিমদের সরকারি চাকরিসহ বৃত্তি নিয়ে দেশ-বিদেশে লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।
এখানে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২৭৫ জন নিবাসী ছিল। চলতি অর্থবছরে ১৫০ শিশুর অনুকূলে সরকারি অর্থ বরাদ্দ হলেও আবাসন সংকটের কারণে বর্তমানে ৫২ শিশু নিবাসী রয়েছে। বাকি বরাদ্দ ফেরত যাচ্ছে সরকারি কোষাগারে। আবাসন সংকটের কারণে ৫ বছর ধরে নতুন করে ভর্তি নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সরকারি এ নিবাসে দীর্ঘদিন ধরে তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ও ৩ জন স্নাতক শিক্ষকের পদসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে।
৩৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। এ ছাড়া ৭ জন প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়ম অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা শিশুদের নজরদারিতে রাখার কথা থাকলেও ৫ বছর ধরে রাতে শিশুদের দেখভাল বা পাহারায় থাকেন না কোনো অভিভাবক। এ ছাড়া সদনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য নেই কোনো অফিস বা কক্ষ। শিশু সদনের অভ্যন্তরে গাছের নিচে একটি বেঞ্চে বসে দাঁড়িয়ে চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাজিরা ও দাপ্তরিক কাজকর্ম।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি নিজে বিভাগীয় শিশু সদনটি পরিদর্শন করেছি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সচিবও ঘুরে গেছেন। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আছে। চলতি অর্থবছরে এখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এটি একটি বড় প্রকল্প হবে। আর এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিভাগীয় শিশু সদনটি আগের মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।