অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৪র্থ দিনে শেষ হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। গতকাল শনিবার শেষ দিনের আয়োজনে সাহিত্য সম্মেলনে দুইটি পর্ব ছিলো। প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল ১০টায়। এ পর্বে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অনুবাদক অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সালাম। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
বিকেল ৩টায় শুরু হয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব। গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত এই পর্বে শিশু কিশোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলী ইমাম, রফিকুর রশীদ এবং লুৎফর রহমান রিটন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।
এদিকে মেলার আয়োজকদের ঘোষণা অনুযায়ী গতকালও ছিল শিশু প্রহর। যার কারণে মেলার দুয়ার খোলে সকাল ১১টায়। টানা তিন ঘণ্টা মেলায় রাজত্ব থাকে শিশুদের। মা-বাবা আর ভাইবোনদের সঙ্গে মেলায় এসে পছন্দের বই কিনে নেয় কোমলমতি শিশুরা। শিশুদের পছন্দে প্রভাব ফেলছে রঙিন পর্দার চরিত্রগুলো। দেশি-বিদেশি কার্টুন বাচ্চাদের যেমন কাছে টানে তেমনি বই কেনার সময়েও তারা কার্টুনের চরিত্রগুলোকে প্রাধান্য দেয়। ‘মটু পাতলু’, ‘ভীম’, ‘ডোরেমন’, ‘মিস্টার বিন’, ‘ডাইনাসোর’সহ বিভিন্ন ধরনের রূপকথার গল্পের বইগুলো বেশি টানছে শিশুদের। আবার বয়স একটু বাড়তি থাকলে অনেক শিশু ভূতের গল্প, নানা রংয়ের আর্ট বই, কমিক্স এবং গোয়েন্দা কাহিনীকেও প্রাধান্য দিচ্ছে। ধানমন্ডি থেকে আসা ২য় শ্রেণির ছাত্র মিনহাজ উদ্দিন বলেন, কমিক্স পড়তে খুব ভালো লাগে। মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। দুই হাতে ঝুলানো বইয়ের ব্যাগ দেখিয়ে বললো অনেক বই কিনেছি।
মেলায় কথা হয় স্কুল শিক্ষক আফজাল হোসেনের সঙ্গে। ভাতিজাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের শিশুরা ভুলে যাচ্ছে। বিদেশি সংস্কৃতি সেই স্থান দখল করছে। বাসায় থাকলে তারা সারাদিন কার্টুন দেখে। এখন মেলায় এসেও দেখি শিশুদের জন্য যত বই রয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশি কার্টুনের চরিত্র দিয়ে লেখা। তিনি অভিযোগ করেন, প্রকাশকরা সংস্কৃতির চেয়ে ব্যবসাকে মূল্যায়ন করছেন বেশি। শিশু প্রহরের পর মেলা প্রতিদিনের মতো শুরু হয় এবং শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়।
গতকালের অনুষ্ঠান: বিকাল ৫টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে বাংলা নাট্যসাহিত্য বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব সাজেদুল আউয়াল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন এবং সুদীপ চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
সন্ধ্যা ৭টায় মূলমঞ্চে বাংলা ভাষার স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের কবিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত সুইডিশ কবি ক্রিস্টিয়ান কার্লসন। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ।
নতুন বই: মেলায় ৪র্থ দিনে নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। মোড়ক উন্মোচন করা হয় ৯টি বইয়ের। নতুন বইয়ের মধ্যে গল্প ২৯টি, উপন্যাস ১৮টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ১৮টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ৩টি, শিশু সাহিত্য ৪টি, জীবনী ১টি, রচনাবলী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬টি, নাটক ২টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৬টি, ইতিহাস ১টি, রাজনীতি ২টি, স্বাস্থ্য ১টি, কম্পিউটার ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি, অন্যান্য ২৩টি। এর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে শেখ হাসিনার ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’, রফিকুল ইসলামের ‘ঢাকার কথা’, অন্য প্রকাশ থেকে তুষার দাশের ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’, অনন্যা থেকে ইমদাদুল হক মিলনের ‘নয় মাস’, পাঞ্জেরী থেকে পিয়াস মজিদের ‘নিঝুম মল্লার’ অন্যতম।
আজকের অনুষ্ঠান: গ্রন্থমেলা আজ ৫ম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আহসান হাবীব জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি তুষার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. অনু হোসেন ও ড. তারেক রেজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক জুলফিকার মতিন। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।