শ্যামল কান্তিকে সরাতে এত কিছু! - দৈনিকশিক্ষা

শ্যামল কান্তিকে সরাতে এত কিছু!

শরিফুল হাসান ও আসিফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে        |

SHAMOL-KANTI-BANGLA24BDNEWSনারায়ণগঞ্জের সাংসদ সেলিম ওসমান এবং তাঁর লোকজন ছাড়া কেউই বলছেন না, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্মের অবমাননা করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি। ওই স্কুলের শিক্ষকেরাও বলছেন, ধর্মীয় কটূক্তি করার কোনো অভিযোগ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কখনোই ছিল না।

তবে কেন এমন ঘটনা ঘটল? নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যাণদী গ্রামের লোকজন এবং স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শ্যামল কান্তি ভক্ত ১৭ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনিই পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়টি দাঁড় করিয়েছেন। জানা গেছে, ওই স্কুলে এবার সবাই এসএসসি পাস করেছে। দুজন পেয়েছে জিপিএ-৫। কিন্তু স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ (বাতিল) চাইছিল না, শ্যামল কান্তি আর সেখানে প্রধান শিক্ষক পদে থাকুন। এর বদলে অন্য একজনকে প্রধান শিক্ষক পদে বসানোর পরিকল্পনা করেছিল। এ ছাড়া ওই স্কুলে সাংসদের বরাদ্দ দেওয়া ৫০ লাখ টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি পরিচালনা পর্ষদের নানা অনিয়ম মানতে রাজি হননি। ফলে এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি বলেন, ৮ মে টিফিনের পর পঞ্চম পিরিয়ডের ক্লাস চলছিল। তিনি ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় ক্লাসে হইচই শুরু হলে তিনি মেয়েদের শান্ত হওয়ার জন্য বলেন। এ সময় রিফাত নামের এক ছাত্র হাসাহাসি করছিল। তিনি তখন রিফাতকে দাঁড়াতে বলেন।

শ্যামল কান্তি বলেন, ‘রিফাত না দাঁড়ানোয় আমি বলি, কিরে, আমাকে তোর প্রধান শিক্ষক বলে মনে হয় না। আমি তোকে দাঁড়াতে বলেছি। একপর্যায়ে আমি তাকে মারধর করি। সে অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে ওষুধ এনে খাওয়াই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা ছড়ানো হয় আমি নাকি ধর্মের বিরুদ্ধে বলেছি। ১৩ মে শুক্রবার আমাকে স্কুলে ডাকা হয়েছিল অন্য বিষয়ের বৈঠকের কথা বলে। কিন্তু স্কুলে এসে দেখি, হাজার হাজার লোক দাঁড়িয়ে। আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এরপর মারধর। কিন্তু আমি কোনো কটূক্তি করিনি।’

রিফাতও ঘটনার একই রকম বর্ণনা দিয়েছে সাংবাদিকদের। তার দাবি, স্যার যে তাকে ডেকেছিলেন, সেটি সে শুনতে পায়নি। এরপর স্যার কলার চেপে তাকে মারধর করেন। এতে তার শার্ট ছিঁড়ে যায়। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারায়। ক্লাসের বাকি সহপাঠীরা পানি পান করায়। এরপর তাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে বসায় এবং ওষুধ দেয়।

স্কুলের কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক জানিয়েছেন, টিফিনের আগে চতুর্থ পিরিয়ডের উত্তম স্যার ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা চিত্কার ও চেঁচামেচি শুরু করলে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি বলেন, ‘তোরা কি মানুষ হবি না?’

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের ইসলামের শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সদস্য সৈয়দ বোরহানুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় স্যার অনুতপ্ত হয়ে ছাত্র রিফাতের বাড়িতে যান এবং তার মায়ের কাছেও ক্ষমা চান। এরপর ৮ থেকে ১২ মে পর্যন্ত কটূক্তির কোনো কথা শুনিনি। এমনকি অতীতেও এমন কথা শুনিনি। কিন্তু ১৩ মে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগেই ওই শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হয়।’

স্কুলের পাশের বায়তুল আতিক জামে মসজিদের মাইক থেকে সেদিন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মসজিদ খোলা থাকে। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র মসজিদে ঘোষণা দিয়েছে। আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগে এ ধরনের অভিযোগ শুনিনি। তবে সেদিন মসজিদের মাইকে ঘোষণা হয় প্রধান শিক্ষক ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, তাড়াতাড়ি স্কুলে চলে আসুন।’

শ্যামল কান্তি ভক্ত অভিযোগ করেছেন, এখন তাঁর মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাই পরিকল্পিত ও সাজানো। কারণ পরিচালনা কমিটির সদস্য মতিউর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিয়ন মিজানুর রহমান ও মোবারক হোসেন এই তিনজনই সেদিন হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এঁরা স্কুলের পরিচালনা কমিটিতে আছেন।

শ্যামল কান্তি বলেন, ‘আসলে আমি তাঁদের কোনো অন্যায় আবদার শুনতাম না। নানা সময় বকাঝকা হুমকি-ধমকি ও মারধর করতে এসেছেন। আমাকে তাঁরা বারবার বলেছেন, “আপনি যেভাবে স্কুল চালাচ্ছেন, এভাবে চলতে পারে না।” আমি তাঁদের বলেছি, আপনাদের কোনো বেআইনি কথা আমি শুনব না। এ কারণে তাঁরা আমাকে সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করেছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোবারক হোসেনকে গতকাল পাওয়া যায়নি। তবে তিনি কয়েক দিন আগে জানিয়েছেন, শুক্রবার নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির সভা শুরু হলে কমিটির সদস্য মতিউর রহমানের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া হয় এক স্কুলছাত্রকে মারধর করা হয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে স্কুলছাত্র ও তার মাকে ডাকা হয়। কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের জবানবন্দি নেওয়ার জন্য ডাকেন। তখন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ম্যানেজিং কমিটির সভায় এসে হামলা চালায়।

সাংসদ সেলিম ওসমানও গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ওই শিক্ষক যে কটূক্তি করেছেন, তার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। তবে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম গতকাল জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে তাঁরা নারায়ণগঞ্জের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে একটি আবেদন দিয়েছেন। আদালত তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে।

চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে: শ্যামল কান্তি ভক্তকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শ্যামল কান্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন। ওই বিভাগের চিকিৎসক মাজেদুর রহমান বলেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে তিনি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036242008209229