টিফিন চলাকালে মাঠে বল খেলছিল। কেউ কেউ শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বারান্দায় ঘোরাফেরা করছিল। এ অপরাধে বিভিন্ন শ্রেণির অর্ধশত শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটিয়েছেন শিক্ষক। গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া অন্যায়।
খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেত্রাঘাতে আহত শিশুদের বাবা-মাসহ স্বজনরা এসেছে। তারা প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরীসহ অন্য শিক্ষকদের তাঁর কক্ষে আটকে বিদ্যালয়টি ঘেরাও করে রেখেছে। মাঠের মাঝখানে ৪৬ জন জন আহত শিশু দাঁড়িয়ে রয়েছে। এদের প্রত্যেকের হাত ও পা বেতের আঘাতে ফুলে লাল হয়ে রয়েছে। আহতদের একজন (শিশু স্বার্থসংশ্লিষ্ট হওয়ায় নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না) জানায়, বিদ্যালয়ের টিফিন চলছিল। সহপাঠীদের নিয়ে সে বিদ্যালয়ের মাঠে বল খেলছিল।
হঠাত্ করে সহকারী শিক্ষক আব্দুল আজিজ আকন্দ ওরফে আবু সালেহ ক্ষিপ্ত হয়ে সবাইকে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে বলেন। তারা ভয়ে ভয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। সালেহ কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেন। তাঁর হাতে থাকা বেত দিয়ে সবাইকে পেটাতে থাকেন। তখন শিক্ষার্থীরা বাবাগো-মাগো বলে চিৎকার করতে থাকলেও বেত্রাঘাত থেকে রেহাই পায়নি।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘বেত দিয়ে মারার সময় স্যারকে হাত-পা ধরি। কিন্তু স্যার কোনো কথা শোনেন নি। বলেন, এইবার আর তরার ক্ষমা নাই। এক পর্যায়ে বেতের আঘাত হাত দিয়ে ফেরালে আরো ভয় দেখিয়ে দুই হাত ওপরে তুলে রাখতে নির্দেশ দেন। ’
নান্দাইল-দেওয়ান সড়কের পাশে চানপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি। ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে এ রকম পথচারীরা বলে, তারা যাতায়াত করার সময় শ্রেণিকক্ষ থেকে ছাত্রদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। গালাগাল করার বিষয়ে শিশুদের কাছে জানতে চাইলে তারা শিক্ষক সালেহর কথা জানায়।
গ্রামবাসী মো. তারা মিয়া ও রুকন উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিক্ষক আসার পর থেকে তুচ্ছ ঘটনায় শিশুদের ব্যাপক মারধর করেন। এটি নামেই কেবল সরকারি বিদ্যালয়। আদতে শিক্ষার্থী নির্যাতন কেন্দ্র। ’
অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজ আকন্দ ওরফে আবু সালেহ জানান, প্রতিদিন টিফিনের সময় কিছু শিক্ষার্থী মাঠে গিয়ে বল খেলে ও দৌড়াদৌড়ি করে। এ সময় তিনি নামাজ পড়তে গিয়ে সমস্যার সম্মুখিন হন। গতকাল নামাজ পড়ার সময় একটি বল তাঁর শরীরের ওপর পড়ে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কয়েক শিক্ষার্থীকে ডেকে হালকা বেত্রাঘাত করেছেন। তবে তা খুব বেশি নয়। এ ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফিরোজ আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা একজন শিক্ষক করতে পারেন, তা এই প্রথম দেখলাম। তাঁর উপযুক্ত শাস্তি প্রয়োজন। ’
নান্দাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনারকলি নাজনিন বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমি হতবাক হয়েছি। রবিবার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। এই সময়ে এমন কাজ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ’