সনদ যাচাই জটিলতায় এমপিওভুক্তি আটকে যাওয়া শিক্ষকের আত্মহত্যা - দৈনিকশিক্ষা

সনদ যাচাই জটিলতায় এমপিওভুক্তি আটকে যাওয়া শিক্ষকের আত্মহত্যা

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি |

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদ্য এমপিওভুক্ত মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক গোলাম মোস্তফা আত্মহত্যা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) ভোরে উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের টলটলিয়াপাড়া গ্রামে নিজ বাসভবনে বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। নিহতের পরিবারের দাবি এমপিওভুক্তি নিয়ে হতাশার জন্যই আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হাকিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “গত ১৫ জুন শিক্ষকের দ্বিতীয় দফার আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। কারণ হিসেবে উল্লেখ ছিল বিপিএড সনদ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসাপত্র প্রয়োজন। যতদূর জানি, সংক্রমণরোধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সেসব সংগ্রহ করতে পারেননি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোলাম মোস্তফার সহকর্মীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, “বিপিএড ডিগ্রির মূল মার্কশিট যোগান দিতে না পেরে গোলাম মোস্তফার বেতন হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে তিনি মার্কশিট আনতে পারেননি। এতে তিনি কয়েকদিন ধরে খুব হতাশায় ভুগছিলেন। স্কুল বন্ধ থাকলেও এমপিওভুক্তির কাজকর্ম করার জন্য সব শিক্ষকের প্রায়ই দেখা হতো। সে সময় গোলাম মোস্তফাকে খুবই বিমর্ষ দেখা যেত।”

আরও পড়ুন : সনদ যাচাই হয় না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, আটকে গেছে হাজারো শিক্ষকের এমপিওভুক্তি

স্কুল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রয়াত গোলাম মোস্তফা প্রায় দেড়যুগ আগে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার পৌর মহিলা ডিগ্রি কলেজে ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় একপর্যায়ে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি ভাঙ্গুড়া উপজেলার আরেকটি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।  দীর্ঘদিন পর গত বছর মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে এমপিওভুক্ত ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমোতাবেক শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অফিসিয়ালি মেইনটেইন করার কাজ শুরু করেন শিক্ষকরা। পরবর্তীতে দুই দফায় আবেদন করেন গোলাম মোস্তফা। কিন্তু গত ১৫ জুন তার দ্বিতীয় দফার এমপিওর আবেদনটি রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে রিজেক্ট হয়ে যায়, এরপর থেকেই হতাশায় ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির ছয়জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও তিনি এমপিওভুক্ত হতে না পারাই আত্মহত্যার মূল কারণ ছিল বলে দাবি গোলাম মোস্তফার পরিবারের। এতে গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। এমনকি তার স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী গোলাম মোস্তফাকে সান্ত্বনা দিতে ব্যর্থ হন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরবেলায় নিজের বাসার বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন গোলাম মোস্তফা।

ভাঙ্গুড়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো সাইফুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “দুই দফায় শিক্ষকের ফাইলটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং পাবনা জেলা শিক্ষা অফিস শিক্ষা অগ্রায়ণ করে দেয়া হয়। কিন্তু রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ফাইলটি রিজেক্ট হয়ে যায়। কি কারণে ফাইলটি রিজেক্ট হয়েছে তা আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন। নিশ্চয়ই কর্মকর্তারা কোনো ত্রুটি দেখেছিলেন তাই ফাইল রিজেক্ট করেছেন।”

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী সময়ে যথাযথ কাগজপত্রসহ এমপিওর আবেদন করলে এই শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারতেন এবং অন্য সবার মতোই বকেয়া বেতন ভাতা পেতেন।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে  হতাশাগ্রস্ত হয়ে বারান্দার গ্রিলে গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই শিক্ষক। তার শরীরে কোনো ক্ষতের চিহ্ন নেই। তবে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার সময় ছোটাছুটি করার সময় দেয়ালের সঙ্গে পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039770603179932