ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়াল ও পিলারে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাঁটল। একটু বাতাস হলেই ছাদ ও দেয়াল থেকে বালি উড়ে ঢেকে যায় শ্রেণিকক্ষ। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চললেও গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ ভবনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঠাঁলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দূরাবস্থার ঘটনার ছয়দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে চার কক্ষ বিশিষ্ঠ একতলা ভবন নির্মাণ করা হলেও মাত্র দেড় যুগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে ভবনটি। ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের অনিয়ম ও শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাবে গত তিন-চার বছর আগে ভবনটির ছাদ ও দেয়ালে ফাঁটল ধরা শুরু হয়। গত বছর থেকে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা।
বিদ্যালয় সূত্রে জনা যায়, ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৯১ জন শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক থাকলেও ভবনের দূরাবস্থার কারণে বিদ্যালয়ের পাশে একটি টিনসেড কক্ষে প্রথম সিফটে প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দ্বিতীয় সিফটে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করাচ্ছে শিক্ষকরা।
তবে, কাগজ কলমে এই বিদ্যালয় নিয়মিত পরিদর্শন করছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আরিফ ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবেকুন্নাহার, খাদিজা, জান্নাতী ও হাসান জানায়, এখন যে অবস্থা তাতে আমরা ক্লাসে বসতেই পারি না। মাথার উপর ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। চোখে বালি পড়ে। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে যায়।
অভিভাবক ফজলুর রহমান, খাদিজা বেগম ও চম্পা বেগম বলেন, ভবনের যে অবস্থা তাতে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় করে। প্রায় দিনই ছাদ দিয়ে বড় বড় পলেস্তারার খন্ড ভেঙে পড়ে। যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে কে এর দায় নেবে? সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে উৎকন্ঠায় থাকি।
একাধিক অভিভাবক জানান, ভবনটি যেকোন মূহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে ও পাশে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি ভেঙে না ফেলা হলে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু ঘটনার পর শিক্ষা অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। এবার ছাদ ভেঙ্গে পড়ার পর এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা ভবনের পাশে একটি টিনসেড কক্ষে সব শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের কথা চিন্তা করে আমরা এখানে ক্লাস নিচ্ছি।
কলাপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল বাসার জানান, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার সংবাদ পেয়ে আমরা ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান বন্ধ করতে বলেছি। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং নতুন ভবনের নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।