সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ঢাবি প্রতিনিধি |

দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন বা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একমত হতে পারছে না ঢকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ বৈঠকে অংশ নেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল এটার পক্ষে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়টা নিয়ে একবার আলোচনা করা হয়েছিল, সেখানে শিক্ষকরা এটা সমর্থন করেনি। 

ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সমর্থন কররে। তিনি মনে করেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। মানুষের কষ্ট কমবে, টাকা সময় দুটোই কম খরচ হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে একই সঙ্গে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও ক্লাস শুরু করতে পারবে।

আরও পড়ুন: 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে দুই দিন, আবেদন ১০টিতে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি

ইউজিসির বৈঠক সম্পর্কে উপ-উপাচার্য  বলেন, ইউজিসিতে তিনি গিয়েছিলেন। তারা বলেছে, স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদ দিয়ে হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিয়ে এ বছর সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা শুরু করা হোক। তখন তিনি বলেছেন, বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, যেমন ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ যারা ভর্তি পরীক্ষা পাইয়োনারিং করবে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ডেকে আলাদাভাবে একটি বৈঠক করা হোক। 
উপ-উপাচার্য আরও প্রস্তাব করেন, বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলো দিয়ে শুরু করার কথা। যাদের অবকাঠামো দুর্বল, এখনো অসম্পূর্ণ তারা পরে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স অনুসারে প্রতিষ্ঠাকাল অনুসারে চক্রাকারে নেবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এ ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও  প্রধানমন্ত্রীও এটা চান বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক। 

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে ভিন্ন ডিসিপ্লিনের সাবজেক্ট বা প্রশ্নফাঁস নিয়ে কোনো অসুবিধা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে একটা পদ্ধতি আছে, সেটা হলো গুচ্ছ পদ্ধতি পরীক্ষা গ্রহণ। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একই ধরনের সাবজেক্ট পড়ানো হয়, তারা আলাদাভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টা তো অমূলক না। সেটা ইউজিসির নেতৃত্বে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম থাকবে এবং প্রশ্নগুলো এরা নিজেরা নিয়ে যাবে।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পাচঁটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হয়, এসব অনুষদের ডিন বা শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও আলোচনা ও পর্যালোচনার দরকার আছে বলে মনে করেন। তারা মনে করেন, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি আরও ভেবে দেখা উচিত। হুট করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। 

শিক্ষকরা মনে করেন, শিক্ষকদের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে হবে। যাতে এর সুফল আসে। আবার কোন কোন শিক্ষক মনে করেন এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষকদের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

এদিকে ইউজিসি থেকে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে এ পদ্ধতির সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সেখানে তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের উচিত, সরকার-ইউজিসির এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করা। শুধু নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন আর স্বাতন্ত্র্যের জন্য নয়, উচ্চশিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দার্শনিক মেজাজ রক্ষার স্বার্থেও তা করা উচিত। আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধী। 

আরো লিখেছেন, মেডিকেলের উদাহরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য হবে না। মেডিকেল এমনকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতি চলতে পারে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিদ্যা জ্ঞানকাণ্ড হিসেবে সমধর্মী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনগুলো বিচিত্র। বরং সমধর্মী বিষয়গুলো কয়েকটি গুচ্ছে বিভক্ত করে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যয় হ্রাস, যাতায়াত দুর্ভোগ কমানো, সময়ের অপচয় এমন কিছু সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করেন শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানো কিংবা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই সঙ্গে সমান মর্যাদা বা শিক্ষার সুযোগের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি। 

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ২৩ জানুয়ারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কথা দেয়নি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিগগিরই আবারও আলোচনা করবে ইউজিসি। এরপরও রাজি না হলে তাদের বাদ রেখেই বাকিগুলো নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে বলে জানান।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034410953521729