সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। এবারে পাস করেছে ৮ লাখ এক হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু মেডিকেলে, কিছু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং অন্যরা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
অথচ এসব শিক্ষার্থীর আসনের বিপরীতে ৩০টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ২১২টি এবং বেসরকারি ৬৪টি মেডিকেল কলেজে প্রায় ৬ হাজার আসন রয়েছে। সরকারি ৯টি ডেন্টাল কলেজে ৪৮০টি এবং বেসরকারি ১৪টি ডেন্টাল কলেজে ৮৯০টি আসন রয়েছে। অন্যদিকে দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৪৭ হাজার ৬৩৬টি। ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় আসন রয়েছে ৯৮ হাজার ৯৩০টি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৭৭৭টি। মেডিকেল কলেজে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু থাকলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থী-অভিভাবকের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সফর বিড়ম্বনা, থাকার বিড়ম্বনা, অচেনা-অজানার বিড়ম্বনা এবং অধিক খরচের বিড়ম্বনা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চান। তারা চান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা।
বিভিন্ন মহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে, বিশেষ করে সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে শিক্ষার্থীরা নিজ জেলায় টেনশনবিহীনভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সচেতন মহল বর্তমান ভর্তি পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ইউজিসির স্পষ্ট ভূমিকা থাকতে হবে।
অথচ ইউজিসির নির্দেশনা রয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা রেখে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করছে না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সমর্থন করছেন না?
একটি পত্রিকার খবরে জানা গেছে, দেশে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে। পরে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে উপাচার্যদের নিয়ে এক সভা হয়। সভায় বেশিরভাগ উপাচার্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন। ইউজিসি দুর্ভোগ লাঘবে মেডিকেল কলেজের আদলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ করেছেন। তারপরও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা যায়নি।
যেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর কথা বলেছেন, সেখানে তা চালু করতে অসুবিধা কোথায়? সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি একটি সুবিধাজনক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা। এ পদ্ধতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা আশা করি, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে।
মোহাম্মদ ইলিয়াছ : সহযোগী অধ্যাপক, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম