রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম নিজেকে যতোই ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুক না কেন, সে মূলত চতুর ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু। বুধবার (১৫ জুলাই) এই পলাতক আসামিকে আটকের পরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি এসময় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কীভাবে তাকে ধরা সম্ভব হলো সেসব নিয়ে কথা বলেন।
বুধবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র্যাব সদর দপ্তরে নেয়া হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নিয়ে র্যাব রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসায় অভিযান চালায়। সিএইচএল বায়তুল এহসান নামের এই বহুতল ভবনের পঞ্চম তলায় সাহেদ করিমের একটি গোপন অফিস আছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তারা। আইন বিষয়ে কোনও ডিগ্রি না থাকলেও এটি ছিল তার ল চেম্বার। অভিযানে সেখান থেকে জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন:
সাহেদকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে
সাহেদেকে নিয়ে উত্তরার স্কুলে র্যাবের অভিযান
বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন সাহেদ
পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজের তথ্যের ভিত্তিতেই সাহেদের অবস্থান জেনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার করা হয়। নৌপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। যেন কেউ চিনতে না পারে সেজন্য বোরকা পরে নৌকায় করে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে র্যাবের নজরদারির কারণে এমন কিছু করতে পারেননি তিনি। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ সকাল নটার দিকে র্যাবের হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। এসময় কর্মকর্তারা জানান, গোঁফ কেটে চেহারা পালটিয়ে পাগলের বেশ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন সাহেদ।
মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সে নিজেকে কখনও অবসরপ্রাপ্ত কখনও চাকরিরত সেনা কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতো। কখনও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পরিচয় দিতো এবং সুকৌশলে ছবি তুলে সেটা ব্যবহার করতো। এমনকি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সাহেদ বালু,পাথর ব্যবসায়ীদের ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে প্রতারিত করেছে।
আরও পড়ুন:
সাহেদ রিজেন্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও জাল সার্টিফিকেট দিতেন : র্যাব
রিজেন্টের সাহেদকে ধরতে মৌলভীবাজারে পুলিশের অভিযান
রিজেন্টের সাহেদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা
রিজেন্টের সাহেদ যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তার বিরুদ্ধে অনেক মামলার বিষয়ে জানা গেছে। সেসবের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের নামে প্রতারণা করছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনামূল্যে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নেওয়া হতো এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১০০০ গ্রহণ করতো। আইসিইউতে ভর্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতো। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিলেরও জন্য জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।
গত কয়দিন সে কোথায় ছিল জানাতে গিয়ে ডিজি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একেকদিন একেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। ঢাকা কক্সবাজার সাতক্ষীরা অঞ্চলে সুকৌশলে আত্মগোপনে ছিল সে। দেড়হাজার কোমড়পুর সীমান্তে লবঙ্গবাতি খাল দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করলে সে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কীভাবে এই প্রতারককে ধরা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে র্যাবের ডিজি বলেন, 'ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন সাহেদ কী মানের প্রতারণার কাজ করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই সে এক জায়গা থেকে এক জায়গায় স্থান পরিবর্তন করছিল। আমরা তাকে ফলো করেছি। এবং সবশেষে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছি।' ঢাকা কবে ছেড়েছে প্রশ্নে র্যাব মহাপরিচালক জানান, 'সে ঢাকা ছেড়েছে আবার ঢাকায় ফিরেছে, আবার বেরিয়েছে। এসবের মধ্যেই ছিল। এই পুরো সময়টাতে সে কখনও ব্যক্তিগত গাড়ি, কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে চলাচল করছিল। অবশেষে নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।'
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এই রোগের চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতাল। তবে তাদের পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় র্যাব। সিলগালা করে রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ও। এরপর দিন ৮ জুলাই চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাটিও সিলগালা করে দেয় র্যাব। র্যাবেরনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, চেয়ারম্যান সাহেদ নিজেই এসব ডিল করতেন। অপকর্মগুলো রিজেন্ট গ্রুপের হেড অফিস থেকে সম্পাদিত হতো