সাড়ে তিন লাখ সরকারি পদ শূন্য - দৈনিকশিক্ষা

সাড়ে তিন লাখ সরকারি পদ শূন্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এর অধীন সংস্থাগুলোয় প্রায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর শূন্যপদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি বেড়েছে। শূন্যপদ পূরণে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও ঢিমেতেতালায় এগোচ্ছে নিয়োগ কার্যক্রম। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনাও খুব একটা আমলে নেয়া হচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম, প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য বার বার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আইনি জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গেও সরকারি শূন্যপদ পূরণের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। এর আলোকেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান গত ৪ মার্চ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে একটি তাগাদাপত্র দেন। শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রণীত কর্মপরিকল্পনা ২০ মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ২০ দিন পার হলেও অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্মপরিকল্পনা পাঠাতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মুখ্য সচিবের তাগাদাপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে সরকারি দপ্তরসমূহে দ্রুত শূন্যপদ পূরণের সদয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় তিনি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সানুগ্রহ অনুশাসন প্রদান করেন।’

সরকারের সচিবদের উদ্দেশে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘অনতিবিলম্বে আপনার মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহে বিদ্যমান শূন্যপদের যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রণয়নের জন্য আপনার ব্যক্তিগত মনোযোগ আকর্ষণ করছি। এ সকল শূন্যপদে কত দিনের মধ্যে জনবল নিয়োগ সম্ভব, তার একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। বিদ্যমান শূন্যপদের তথ্য ও এ সকল শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রণীত কর্মপরিকল্পনা ২০ মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ কার্যক্রমে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা রুটিন দায়িত্ব, বদলি ও পদায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন।

শূন্যপদ পূরণে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গরজ না থাকলেও প্রশাসনের প্রায় সবক্ষেত্রেই পদোন্নতি কার্যক্রম দ্রুত হচ্ছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য বিভাগে নিয়োগ কার্যক্রম এগোচ্ছে দ্রুতগতিতেই। অথচ জনবল শূন্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে সরকারের শূন্য পদ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার। এর আগে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাতীয় সংসদে জানান, দেশে বর্তমানে সরকারি শূন্যপদ ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৬টি অর্থাৎ নিয়মিত শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

তরুণ ও যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদানকে বর্তমান সরকার বিশেষ অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তাগাদাপত্রে বলা হয়েছে, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারি দপ্তরসমূহের শূন্যপদে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সরকারের এ অঙ্গীকার অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে সময়াবদ্ধ ও সক্রিয় কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহে বিদ্যমান শূন্যপদ পূরণের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানান, ‘সরকারের বিভিন্ন অফিস ও মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৬টি সরকারি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্য রয়েছে ৩ হাজার ৮৫৪টি পদ। এসব পদ পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’ শূন্যপদ পূরণে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ ধারাবাহিকভাবে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পদ সৃজনের সম্মতি প্রদান করে। পরে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নিয়োগবিধি অনুযায়ী ওই পদে জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে। আদালতের কার্যক্রম শেষ না হওয়া এবং পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কিছু শূন্যপদ পূরণ করা যায় না।’

মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক শূন্যপদ: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে রাজস্ব খাতের ৫৭ হাজার শূন্যপদে ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব পদের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ দেয়া হবে প্রায় ৪২ হাজার কর্মী। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চার বিভাগ ও সংস্থায় প্রায় ৫৩ হাজার পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ৪২ হাজার ২১২টি পদ শূন্য।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপ-পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শক, কম্পিউটার অপারেটরসহ কয়েকটি ক্যাটাগরির প্রায় ১১শ’ শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই নিয়োগ কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইতোমধ্যে ওইসব ক্যাটাগরির আরও ৬-৭শ’ পদ শূন্য হয়েছে। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘আমি স্বচ্ছতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে যাতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থায় ১ হাজার ২৫৭টি শূন্যপদ রয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েই মোট ৬৫টি পদ খালি। এর মধ্যে ৪২টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ১৮৭টি পদের মধ্যে ৬১টি শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩০টি শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ৭৭৮টি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) ১৬৩টি ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (আরডিএ) ৩৪টি পদ শূন্য রয়েছে।

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধিভুক্ত বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ৩০ হাজার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষকের ২০ হাজারেরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039269924163818