উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সিংগাইর সরকারি ডিগ্রি কলেজটি শিক্ষক সংকট এবং সেই সঙ্গে অবকাঠামোগত সমস্যায় রয়েছে। অপরদিকে, উপজেলার ৯২টির মধ্যে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
সিংগাইর ডিগ্রি কলেজটি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারিকরণের পর থেকেই সেখানে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন সেই শূন্য পদে আর নিয়োগ হয়নি।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. নুরুদ্দিন বলেন, কলেজে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন মাত্র ৩৫ জন। এর মধ্যে খণ্ডকালীন দুই জন দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে অনিয়মিতভাবে পাঠদান করছেন। কলেজে কমপক্ষে ১০০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। বিশেষ করে ইংরেজিতে দুই জন, ইসলামের ইতিহাসে দুই জন, বাংলা সাহিত্যে দুই জন, ব্যবস্থাপনায় এক জন ও কম্পিউটার শিক্ষক এক জন জরুরিভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
প্রভাষক এনামুল হক বলেন, এখানে মাত্র তিনটি ভবনে ১২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। আরও ১০/১২টি ভবন দরকার। শ্রেণিকক্ষের অভাবে দুই শিফটে উচ্চ মাধ্যমিকে সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং ডিগ্রিতে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া আসবাবপত্রের অভাবও রয়েছে। এ ছাড়া অনার্সে ব্যবস্থাপনা ও সমাজকর্ম—মাত্র এ দুটি সাবজেক্ট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পাঁচটি সাবজেক্টের প্রয়োজন। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সাবজেক্ট বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে পছন্দের সাবজেক্ট না থাকায় এবং আসা যাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট কলেজে যাচ্ছে। কেউ বা ঝরে পড়ছে অন্য কলেজে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকার কারণে।
এদিকে, উপজেলার ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টির ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ এসব ভবন ধসের আতঙ্ক ও শ্রেণিকক্ষের সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে চলছে ৩ হাজার ৩২৩ শিক্ষার্থীর পাঠদান। এসব ভবনের ছাদ ও দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। বেরিয়ে গেছে সুরকি ও রড। দুর্বল হয়ে পড়েছে ভবনের বিম ও স্তম্ভ। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা ও খোয়া।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যনুযায়ী নয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেহান খিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সারারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম গোবিন্দল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুদক্ষিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার জানান, ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে দুর্ঘটনা ঘটে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এসব স্কুলে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।