প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার দায়ে করা হত্যা মামলার ১০ জঙ্গি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। সেইসঙ্গে দণ্ডিতদের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে। আর খালাস পেয়েছে দুই জঙ্গি।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ মামলার বহু প্রতীক্ষিত রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গনজুড়ে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। মামলাটিতে বিভিন্ন সময়ে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর মামলাটিতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের এই দিন ঠিক করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিচার, পাঁচ বছর পর তা রায়ের পর্যায়ে এল।
সিপিবিতে হামলার আজ ১৯তম বার্ষিকী। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় মোট পাঁচজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলায় এখন আসামি ১২ জঙ্গি। তাদের মধ্যে আটজনই পলাতক। আর কারাগারে থাকা চারজনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকালে আদালতে আনা হয়। এই ৪ জঙ্গি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।
আসামিরা হলেন, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান, আরিফ হাসান সুমন, মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ, মাওলানা মশিউর রহমান, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, নুরুল ইসলাম, মহিবুল মুস্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন ও রফিকুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এছাড়া কারাগারে আছেন মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান, আরিফ হাসান সুমন, মুফতি মাঈনুদ্দিন শেখ। পলাতক মাওলানা মশিউর রহমান, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, নুরুল ইসলাম, মহিবুল মুস্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন ও রফিকুল ইসলাম।
ওই বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন খুলনার বটিয়াঘাটার সিপিবির নেতা হিমাংশু মণ্ডল, খুলনার রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিকনেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিকনেতা আবুল হাশেম ও মাদারীপুরের সিপিবির কর্মী মোক্তার হোসেন। আর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খুলনা বিএল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা বিপ্রদাস রায়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানীর পল্টন ময়দানে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেয়া হয়।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ নভেম্বর মামলাটি পুনঃতদন্তের পর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে অভিযোগ গঠন করেন সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃণাল কান্তি সাহা। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।